ধর্ষণ অপ্রতিরোধ্য: নারীর নিরাপত্তা কোথায়?

ধর্ষণ অপ্রতিরোধ্য: নারীর নিরাপত্তা কোথায়?


হানিফ খন্দকার
সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নির্যাতন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। নারীর নিরাপত্তার প্রতি অবজ্ঞা থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে। এমন ঘটনায় শিকার হয়ে অনেক নারী আত্মহত্যার পথকেও বেছে নিয়েছেন।
কেন ধর্ষণের প্রতিকার হচ্ছে না? শিক্ষিত মানুষ, ছাত্ররাজনীতি করা মানুষ, চাকুরে মানুষ, বাস-ট্রাকের ড্রাইভার-কন্ডাক্টর এবং ধর্ম-কর্ম করা মানুষ এতে জড়িয়ে পড়ছে। স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার নারী, বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ, শিক্ষকের কাছে ধর্ষণের শিকার ছাত্রী, প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষক এক ছাত্রীকে কারণ দর্শাতে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন নির্যাতন চালান। গত ৪ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ বহিরাগত একজন। বাংলাদেশে ধর্ষণের শাস্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদ- করা হয়েছে। তারপরও এর হার হ্রাস না পেয়ে দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ধর্ষণের মামলায় ৩ শতাংশের বিচার ও শাস্তি হয়। বাকি ৯৭ শতাংশ আসামি ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়ে যায়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি রোববার মধ্যরাতে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলী গ্রামে চোখে-মুখে সুপার গ্লু দিয়ে মুখে টেপ লাগিয়ে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ ও নির্মম নির্যাতন করা হয়। গত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসির এক উপপরিচালক শিশু ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পর তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে জাহাঙ্গিরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলে ডেকে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে কয়েকজন শিক্ষার্থী। গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারি রোববার মাদারীপুরের আদালতে রাজৈরের টেকেরহাটের ভূতের আড্ডা রেস্টুরেন্টে ধর্ষণের শিকার নবম শ্রেণী পড়–য়া এক কিশোরী অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নে ধর্ষণের শিকার হয় এক কন্যাশিশু (১২)। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে শওকত আলী (৬০) নামের এক বৃদ্ধ ওই শিশুটিকে ধর্ষণ করে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে গত ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর লায়লা বেগম (৩০) নামের এক গার্মেন্টকর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি আশরাফুল আলমকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গত ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ধর্ষণের শিকার হয় এক ভিক্ষুক (২৬)। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রোববার ধর্ষক শামীম মিয়াকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানা এলাকার ৩ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে নারীদের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন স্বামী আর ভিডিওধারণ করতেন স্ত্রী। এ ঘটনায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি মো. আলমগীর ওরফে রয়েল (৪০) এবং তার স্ত্রী হেলেনা খাতুনকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরীতে তালাকপ্রাপ্তা এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মুবিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রোববার ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের নান্দেশ্বরী এলাকায় ছেলেকে চাকরি দেয়ার আশ্বাসে বাড়িতে ডেকে নিয়ে মাকে ধর্ষণ করে ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিন।
ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়াটা বেশ অ্যালার্মিং। বিশ্ববিদ্যালয়সহ যে কোন জায়গায় এমন ঘটনা ঘটা খুবই নেতিবাচক। শুধু জাহাঙ্গীরনগর নয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আসলে কেমন তা নিয়েও এখন ভাববার বিষয়। আমাদের অভিভাবক, শিক্ষক সমাজ ও গণমাধ্যমের এই বিষয়ে কঠোর ভূমিকা নেয়া উচিত বলে জানান তিনি।

Share your comment :