রেমিট্যান্স সংগ্রহে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় ভাটা

রেমিট্যান্স সংগ্রহে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় ভাটা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেকর্ড গড়েছে প্রবাসী আয়। তবে বাড়তি এই প্রবাসী আইয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবদান রাখতে পারেনি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স আহরণ ৩০ শতাংশ কমেছে। এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স আহরণ সাত মাসে অর্ধেকে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৯৭৩ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী, জনতা, সোনালী, রূপালী ও ব্যাসিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৪৪ মিলিয়ন ডলার।
অপরদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সপ্তম মাস জানুয়ারিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৭১ মিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে জানুয়ারিতে সার্বিক রেমট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে কমেছে ৭৩ মিলিয়ন ডলার। যা শতকরা হিসাবে জুলাইয়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে বিডিবিএল ছাড়া বাকি পাঁচটি ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে অগ্রণী ব্যাংকে। দীর্ঘদিন এ ব্যাংকটির অবস্থান শীর্ষ তিনে ছিল। এক সময় ব্যাংকটি রেমিট্যান্স সংগ্রহে প্রথম স্থানে ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স কমতে শুরু করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২৩ মিলিয়ন ডলার। আর অর্থবছরের সপ্তম মাস জানুয়ারিতে এসেছে মাত্র ৬৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ব্যাংকটির রেমিট্যান্স অর্ধেকে নেমেছে। আগের তিন মাসে এটি ৫০ মিলিয়নের ঘরে ছিল।
আর গত জুলাইয়ে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসছিল ৬৩ মিলিয়ন ডলার। ব্যাংকটিতে জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় কিছুটা বেড়েছে। গত মাসে এসেছে ৭৫ মিলিয়ন ডলার। রুপালী ব্যাংকে এমনিতেই রেমিট্যান্স কম আসে। বর্তমানে আরও কমে গেছে। জুলাইয়ে ১১ মিলিয়ন আসলেও জানুয়ারিতে এসেছে মাত্র ৪ মিলিয়ন ডলার।
এছাড়া, সরকারি পণ্য আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখা সোনালি ব্যাংকের রেমিট্যান্সেও পতন হয়েছে। গত জুলাইয়ে আসা ৪৫ মিলিয়ন জানুয়ারিতে নেমেছে ২৫ মিলিয়নে। বেসিক ব্যাংকে সে অর্থে রেমিট্যান্স আসে না। তবে বিডিবিএলের মতো একেবারেই যে আসে না তা নয়। ব্যাংকটিতে দশমিক ১৬ মিলিয়ন প্রবাসি আয় এসেছিল জুলাইয়ে আর জানুয়ারিতে এসেছে দশমিক শুণ্য ৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ব্যাংকের রেমট্যান্স শুণ্যের কোটায় নেমেছে।

অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ মহাব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, ‘মূলত নিয়ম মানতে গিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহে পিছিয়ে পড়েছে তার ব্যাংক।’ তাছাড়া দিন দিন রেমিট্যান্স সংগ্রহকারি ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা বাড়ছে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা। অপর একটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নমনীয়তায় বেশি দামে ডলার কিনে কম দামে বিক্রির যে প্রথা চালু হয়েছে তা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ভোগাচ্ছে।’ অনেক ব্যাংক কালোবাজারে ডলার ব্যবসায় মেতে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২১০ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় বেশি। সে বছর এই মাসে আয় এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। জানুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ছয় কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার ডলার, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৮৫ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।

চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আগের মাস নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৩ কোটি ৪০ হাজার ডলার, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।