কথিত শ্রমিকনেতার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ, যেকোনো সময়ে গ্রেফতার
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক লীগের স্বঘোষিত সাধারন সম্পাদক কথিত শ্রমিকনেতা নজরুল ইসলাম খোকনের প্রতারণার ফাঁদে সবহারা হচ্ছেন পরিবহণ মালিকরা। তার অনৈতিক কর্মকান্ডে পরিবহণ সেক্টরে চলছে অসন্তোষ। নিজেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীগের সর্ববৃহত্তম সংগঠন শ্রমিক লীগের নেতা দাবী করলেও সে বাস্তবে জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বর্তমানে নিজেকে বাচাঁতে এক শ্রমিকলীগ নেতার আশ্রয় প্রশয়ে থেকে বিআরটিএ কে চাপে রেখে গাড়ির রেজিষ্টেশন, রুট পারমিট ও সিএনজি ট্যাক্সি স্ক্যাপ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে মালিকদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ/চাঁদাবাজি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, কথিত শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাকে হুমকি, চাঁদাবাজি এবং প্রতরণার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। সময় হলেই পুলিশ গ্রেফতার করবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, থ্রি-হুইলার অটোটেম্পো ইঞ্জিঃ নং R7F 2887188 চ্যাসিস নং MBX 0000DFVG 480921, থ্রি-হুইলার অটোটেম্পো ইঞ্জিঃ নং BBZWHJ 48074, চ্যাসিস নং MB2A41AZXHWJ 80720 ও থ্রি-হুইলার অটোটেম্পো ইঞ্জিঃ নং R7F 28870000, চ্যাসিস নং MBX0000DRVG 480316 মডেলের গাড়ী গুলো চট্টগ্রাম বিআরটিএ থেকে রেজিষ্ট্রেশন ও রুট পারমিট করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০২২ সালে গাড়ি প্রতি ৪৫,০০০ টাকা করে মোট ১,৩৫,০০০ টাকা গ্রহণ করেন নজরুল ইসলাম। কিন্তু গাড়ি গুলোর রেজিষ্ট্রেশন ও রুট পারমিট করে না দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর রাহাত্তার পুল থেকে চকবাজার পর্যন্ত চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক লীগ (রেজিঃ নং চট্ট ১৪৬৯) এর ব্যানারে রীট পিটিশন মামলা নং ৬৭৫৬/২০২২ এর আদেশের অধীনে এই থ্রি-হুইলার অটোটেম্পো গুলো কিছুদিন রাস্তায় চালানোর ব্যবস্থা করে দেন এই শ্রমিক নেতা। কিন্তু গাড়ি গুলো রাস্তায় চালাতে গিয়ে কথিত শ্রমিকলীগ নেতা নজরুল ইসলামের ভাই মোঃ সুমন সহ লাইনম্যান মনির হোসেন প্রকাশ মইন্যার মাধ্যমে প্রতিটি গাড়ীর ভর্তি ফি ৩০,০০০ টাকা ও দৈনিক চাঁদা ৩০০ টাকা করে মাসিক ৩,০০০ টাকা আদায় করেন। সর্বশেষ গত ২৮ জুলাই ২০২২ ইং মহামান্য হাইকোর্ট রীট পিটিশন মামলা নং ৬৭৫৬/ ২০২২ আদেশ বাতিল হলে সিএমপি ট্রাফিক বিভাগ গাড়ী গুলো রাস্তায় চলাচল বন্ধ করে দেন। গাড়ি গুলো চলাচল বন্ধ হওয়ায় কথিত শ্রমিকলীগ নেতা নজরুল ইসলামের কাছে রেজিষ্ট্রেশন ও রুট পারমিটের জন্য দেওয়া টাকা ও গাড়ির ফাইল ফেরত চাইলে তা অস্বীকার করে তাদের কে হত্যা করে লাশ ঘুম ও মিথ্যা মামলায় জেল খাটানো হুমকি প্রদান করলে নিরুপায় হয়ে এই ৩ জন পরিবহন মালিক বাকলিয়া থানায় অভিযোগ দিতে গেলে গত ৩০/০১/২০২৪ ইং তারিখ বিকাল ৪ টায় শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক ৫ নং ব্রীজের মুখে নজরুল ইসলাম, মোঃ সুমন, মইন্যা, কুত্তা রাশেদ সহ অজ্ঞাত চার/পাঁচ জন হাজির হয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে বাধা প্রদান করায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুলিশ কমিশনার নিকট আবেদন করেন ভুক্তভোগীরা।
আরেক ‘ভুক্তভোগী’ চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক লীগের সভাপতি উজ্জল বিশ্বাস জানান, চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক লীগের স্বঘোষিত সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন পেশাদার একজন চাঁদাবাজ ও ধান্ধাবাজ শ্রেণির লোক তার বিরুদ্ধে আমি একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছি। তার নিজস্ব কিছু লোকজন নিয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএ এর কর্মকর্তা ও পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা তার নেশা ও পেশা। শুধু তাই নই শ্রমিক লীগ নেতার সাইনর্বোডে পরিবহন মালিকদের মিথ্যে আশ্বাস ও তথ্য দিয়ে তাদের ব্যবহার করে বিআরটিএ এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের চাপে রেখে গাড়ির রেজিষ্টেশন, রোড় পারমিট, সিএনজি স্ক্র্যাপকরণ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে মালিকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে এই নেতা। কিন্তু পরিবহন মালিকরা (অভিযোগকারী) যখন নজরুল ইসলাম খোকনের ছল চাতুরি বুঝতে পারে তখন তাদের দায়েরকৃত অভিযোগ গুলো প্রত্যাহার করে নেই। মোঃ নজরুল ইসলাম খোকনের এই প্রতারণার ফাঁদে পরিবহণ মালিকরা সর্বহারা তো হচ্ছেন তার পাশাপাশি পরিবহণ সেক্টরে অসন্তোষ চলছে।
জানতে চাইলে এ ব্যাপারে নজরুল ইসলাম ফোনে বাংলাকন্ঠকে বলেন, এগুলো সবই মিথ্যা। আমার চরিত্র হনন করতে কতিপয় লোক ভুয়া মালিক সাজিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ দায়ের করেছ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা আমাকে শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে বহিস্কার করেছে প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই ভুয়া। আমাক বহিস্কার করার এখতিয়ার তাদের কে দিলো?
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক পরিবহন মালিক বলেন, নজরুল অনেক ব্যক্তিকে ফুসলিয়ে গাড়ি কিনতে উৎসাহ জোগায় এবং রেজিস্ট্রেশন ,রুট পারমিট করে দেওয়ার কথা বলে শতাধিক মালিক থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে । সে ভয়ংকর প্রকৃতির লোক । তার কথার বাইরে গেলে হত্যা করে লাশ গুম ও মিথ্যা মামলায় জেল খাটানোর হুমকি দেয়। তাই কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।
আল্লাহর দান মোটরসের মালিক আলী আকবর জানান, কথিত শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খোকন বিআরটিএতে সিএনজি টেক্সি স্ক্যাপ করনের আশ্বাস দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বিআরটিএ বিরুদ্ধে একটি ভিডিও করতে বাধ্য করায় এবং ৫ /৬টি সিএনজি ট্যাক্সি প্রতিটি স্ক্যাপ করনে তিন লক্ষ টাকা দাবি করে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি ) কমিশনার কাছে কথিত শ্রমিকনেতা নজরুলের বিরুদ্ধে অসংখ্য মালিক তার প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। এরমধ্যে তিন মালিকের অভিযোগ আমাদের হাতে আসে।
এর মধ্যে তিনজন থ্রি হুইলার অটোটেম্পু মালিক হলেন যথাক্রমে মো: সাদ্দাম হোসেন ,মো ফারুক , মো: জসিম উদ্দিন ।
এই তিন মালিকের সিএমপি কমিশনার বরাবরে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,কথিত শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খোকন বিআরটিএ হইতে রেজিষ্ট্রেশন ও রুট পারমিট সম্পূর্ন করার আশ্বাসে দিয়ে গাড়ি প্রতি নগদ ৪৫ হাজার টাকা নেন। পরবর্তীতে মালিকরা রুট পারমিট,রেজিস্ট্রেশনের তাগাদা দিলে সে রাহাত্তার পুল হতে চকবাজার এবং বলিরহাট হতে বহদ্দারহাট পর্যন্ত চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক লীগ রেজিঃ নং চট্ট ১৪৬৯ এর ব্যানারে রীট পিটিশন মামলা নং ৬৭৫৬/২০২২ এর আদেশের অধীনে কিছুদিন গাড়ীগুলো চালানোর ব্যবস্থা করে দেন। সে সুবাধে তার ভাই সুমন, লাইনম্যান মনিরের মাধ্যমে প্রতি গাড়ী ভর্তি ৩০ হাজার টাকা। দৈনিক চাঁদা ৩শত টাকা এবং পুলিশ খরচ বাবদ মাসিক ৩হাজার টাকা আদায় করেন। সর্বশেষ গত জুলাই ২০২২ মহামান্য হাইকোর্ট রীট পিটিশন মামলা নং ৬৭৫৬/ ২০২২ আদেশ বাতিল হলে সিএমপি ট্রাফিক বিভাগ গাড়ীগুলো চলাচল বন্ধ হয়ে দেন। যার কারণে রেজিষ্ট্রেশন ও রুট পারমিটের জন্য দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে তা ফেরত দিতে অস্বীকার করে এবং হত্যা করে লাশ গুম ও মিথ্যা মামলায় জেল খাটানো হুমকি প্রদান করিলে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন মালিক যৌথভাবে বাকলিয়া থানায় অভিযোগ দিতে গেলে গত ৩০শে জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল ৪ টায় শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক ৫ নং ব্রীজের মুখে নজরুল ইসলাম খোকনসহ তার ভাই সুমন, মইন্যা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে বাধা প্রদান করেন।
ক্ষতিগ্রস্থ মালিকরা টাকা ফেরত পেতে সিএমপি কমিশনারের হস্তক্ষেপ চান।
Share your comment :