মরা খালে পরিণত আত্রাই নদী, দুশ্চিন্তায় কৃষক-জেলে
নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর মান্দায় আত্রাই নদীর একটি ঐতিহ্যবাহী নদী। যুগযুগ ধরে এ নদী খনন না করায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা নদী না মাঠ। এতে কৃষিকাজে সেচ, গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য পানির চরম সংকটে পড়েছেন নদী পাড়ের বসবাসকারী মানুষ। অপরদিকে মানবেতর জীবনযাপন করছে মৎস্যজীবীরা। ফলে নদীকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে খননের জোরদাবি জানায় এ অঞ্চলে সকল পেশাজীবীর মানুষ।
সরে জমিনে ঘুরে দেখা যায়, মান্দা উপজেলার পাঁজরভাঙ্গা এলাকা থেকে মিঠাপুর পর্যন্ত পানি শুকিয়ে গেছে। নদীর কিছু অংশ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। অনেকে নদীর মধ্যে দিয়ে চলাচল করছে। কোথাও আবার লোকজন সামান্য পানিতে মাছ ধরছে। অন্যদিকে ভেকু মেশিন দিয়ে নদীর মধ্যে ড্রেন করে নির্দিষ্ট জায়গায় পানি জমিয়ে বোরো ধানের জমিতে পানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া কিছু কিছু জয়াগায় নদীর বুকে ধান চাষসহ বিভিন্ন ফসল লাগানো হয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। ভারতের হিমালয় অঞ্চলে উৎপত্তি হয় আত্রাই নদীর। নদীটির সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩৯০ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৩০ মিটার। মূলত এ নদী প্রভাবশালীদের দখল, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও পলি পড়ে পানির প্রবাহ একেবারে বন্ধের দিকে। বর্তমানে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।
পাঁজরভাঙ্গা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, একসময় এই আত্রাই নদীতে সারা বছর পানি থইথই করত। চলত পালতোলা নৌকা। কিন্তু প্রতি বছর চৈত্র মাস আসার আগেই বেশ কয়েক বছর ধরে নদীতে পানি থাকে না। ফলে গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য পানির চরম সংকটে পড়েছেন নদীপাড়ের বসবাসকারী মানুষ। অন্যদিকে নদী পাড়ের গ্রামের জেলেরাও পড়েছেন চরম বিপাকে।
চকবালু গ্রামের কৃষক আজাদ মণ্ডল বলেন, বাড়ির পাশে আমাদের এই আত্রাই নদীর ওপর নির্ভর করে কৃষিজমিতে সেচ দিয়ে থাকি। কিন্তু প্রতি বছর বোরো মৌসুমে নদীতে ঠিকমতো পানি থাকার কারণে, অতিরিক্ত খরচ করে সেচ পাম্প বসিয়ে পানি উত্তোলন করে ধানক্ষেতে দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধান চাষে অনেকটায় লোকসান হতে হয়। ফলে আত্রাই নদীটি অতি দ্রুত জরুরি ভিত্তিতে খনন করা না হলে আমাদের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।
আমিনগঞ্জ গ্রামের স্থানীয় মৎস্যজীবী জমির হোসেন বলেন, বাড়ির পাশেই আত্রাই নদী। এই নদী আমাদের একমাত্র জীবিকা নির্বাহের পথ। এ নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু এখন আর নদীতে পানি নেই। ফলে মাছও পাওয়া যায় না। এতে আমাদের সংসার চালানো বড়ই কষ্টকর হচ্ছে। ফলে আমাদের একটাই দাবি অতিদ্রুত এই নদী খনন করে সংস্কার করা হোক।
মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. শায়লা শারমিন বলেন, আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর পানির ওপর নির্ভর করে কৃষি চাষাবাদ। নদীর নাব্যতা কমার কারণে বিভিন্ন সময়ে টিউবওয়েল, শ্যালো টিউবয়েলের মাধ্যমে সেচকার্য চলছে। তবে দিনদিন যে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ছে তাতে পানির লেয়ারটা নিচে চলে যাচ্ছে। যদি নদী খনন করা সম্ভব হয়, তাহলে উপরের স্তরের পানি ব্যবহারের ফলে নিচের স্তর ব্যবহার কমবে। এতে কৃষক লাভবান হবে। মান্দা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দিপংকর পাল বলেন, মান্দা উপজেলায় নিবন্ধিত মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪ শত ৬৫ জন। ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও ২০০ জন নিবন্ধিত মৎস্যজীবী বেড়েছে।
বর্তমানে উপজেলার সবচেয়ে বড় নদী আত্রাই ও শিব নদীর পানি স্বল্পতার কারণে জেলেরা তাদের পেশা পরিবর্তন করছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম ব্রহানী সুলতান মামুদ গামা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আত্রাই ও শিবনদ সংস্কারসহ খননের বিষয়ে কথা হয়েছে। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই নদী দুটি সংস্কারসহ খননের প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। আশ্বস্ত করেছেন নদী দুটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খুব শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এআর-১৯/০৪/২৪
Share your comment :