মাদকে এখনো সর্বেসর্বা বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ডিজিসহ বহাল অভিযুক্তরা

মাদকে এখনো সর্বেসর্বা বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ডিজিসহ বহাল অভিযুক্তরা

বিশেষ প্রতিনিধি, বাংলাকন্ঠ
গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পতনের পরও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মহাপরিচালকসহ এখনো বহাল তবিয়তে আছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের পদধারী কর্মকর্তারা। নতুন সরকার গঠনের পর সরকারী সব অফিসে শীর্ষ পদে পরিবর্তন হলেও সরকারের এ সংস্থাটিতে এখনো দাপটের সঙ্গে ছড়ি ঘুরাচ্ছেন স্বৈরাচার হাসিনার আর্শিবাদপুষ্ঠ মহাপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাদের নিয়ন্ত্রিত শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে এখনো অসহায় ১৫ বছর ধরে সুবিধাবঞ্চিত কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারি সকল অফিসে সংস্কার হচ্ছে। দুর্নীতিবাজ, প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের অপসারণ করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীও এখন সংস্কারের জন্য সোচ্চার। তারা চাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন নেতাকর্মীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেসব কর্মকর্তারা প্রভাব বিস্তার করছিলেন তাদের সরিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুবিধাবঞ্চিতদের সেসব পদে যাতে পদায়ন করা হয়। শিগগিরই সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ ছাড়া এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
ডিএনসি সূত্র বলছে, যেসব এলাকায় মাদকসেবী, মাদক কারবারি, মদের বার বেশি- সেসব এলাকায় মাদকের কর্মকর্তাদের অবৈধ আয় বেশি হয়। তাই ওই এলাকায় পোস্টিং পাওয়াকে অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ ভাষায় ‘প্রাইস পোস্টিং’ বলা হয়। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা দিনে দিনে হয়ে উঠছিলেন আরও বেপরোয়া। এ ছাড়াও অধিদপ্তরে নিয়োগ দেয়া হতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী। এ ছাড়াও কর্মকর্তারা তাদের অবৈধ আয় থেকেও নিয়মিত মাসোহারা দিতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। ভাগবাটোয়ারা এবং ফায়দা নিতে অধিদপ্তরের পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটি গঠন করেছে চক্রটি।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বঙ্গবন্ধু পরিষদের একটি কমিটির সভাপতি প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ও উপ-পরিচালক (ঢাকা উত্তর) আবুল হোসেন, সহ-সভাপতি ও উপ-পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক ও সহকারী পরিচালক রাহুল সেন, প্রচার সম্পাদক ও সহকারী পরিচালক শিরিন আক্তার রয়েছেন। এ ছাড়াও চক্রে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের অপর কমিটির সভাপতি ও উপ-পরিচালক (ঢাকা-গোয়েন্দা) রবিউল ইসলাম, একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপ-পরিচালক হামিমুর রশিদসহ আরও অনেকে।


বঙ্গবন্ধু পরিষদের দ্বিতীয় কমিটির সহসভাপতি ও উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. মেহেদী হাসান ছাত্রজীবনে ছিলেন শহিদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি। চাকরি জীবনের শুরুতেই সহকারী পরিচালক (গবেষণা+প্রকাশনা) পদ থাকলেও তিনি ভাগিয়ে নেন সহকারী পরিচালক পদ। সদর দপ্তরে বসে সারা দেশের মদের বারের লাইসেন্সের দিতেন এই মেহেদী হাসান। প্রতিটি বার লাইসেন্সে পাঁচ থেকে আট লাখ টাকা করে নিতেন। এভাবে তিনি হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। পরবর্তীতে খন্দকার রাকিবুর রহমান মাদকের ডিজি হলে জড়িয়ে পড়েন বদলি বাণিজ্যে। চাকরি জীবনে মেহেদী হাসান একাধিক প্রাইস পোস্টিং পেয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে, ডিডি (গাজিপুর), ডিডি (বগুড়া), এডি (ঢাকা গোয়েন্দা)। এ ছাড়াও অপর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপপরিচালক মো. হামিমুর রশীদ তার চাকরি জীবনের প্রায় ৯ বছর কাটিয়েছেন সদর দপ্তরে। এ ছাড়াও প্রাইস পোস্টিং পেয়ে মানকিগঞ্চে এক বছর ও সম্প্রতি ট্রান্সফার নিয়ে পটুয়াখালী আছেন।


ডিএনসি সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক বিভাগীয় মামলা। যার মধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পুলিশের অভিযানে ৫ কেজি হেরোইন জব্দ করা হয়। রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য সেটি ডিএনসি ল্যাবে পাঠানো হয়। কিন্তু আসামি পক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দুলাল ভুল প্রতিবেদন দেন। ধরা পড়ার পরে দেশ জুড়ে আলোচিত এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এ ছাড়াও ৮ মাস আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যৌথ অভিযানে একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে দুই কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার করা হয়। এরপর সেই হেরোইন ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে সেখানে অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন দিয়েছেন ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা। প্রতিবেদনে সরাসরি মাদক না লিখে তিনি লিখেছেন, ‘মাদকসদৃশ বস্তু পাওয়া গেছে।’ এভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদকের বড় চালানে ভুল ও অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগ রয়েছে দুলাল কৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ২টি বিভাগীয় মামলা চলছে। আরও দুটি মামলায় তাকে তিরস্কার দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ভুয়া কোর্ট সার্টিফিকেট দিয়ে টিএডিএ বিল নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রাসায়নিক পরীক্ষার টাকার বিনিময়ে ভুল রিপোর্ট ও নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য করে টাকা আয়ের অভিযোগ রয়েছে।


ডিএনসি সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ও ঢাকা মেট্রো উত্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন ছাত্র জীবনে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা। আওয়ামী লীগ নেতা আমির হােসেন আমুর নিজ এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তার সঙ্গে রয়েছে গভীর সখ্যতা। মেধা ও তালিকায় পেছনে থেকেও সুপারিশে এই আবুল হোসেন উপ-পরিচালক থেকে খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালকের পদ বাগিয়ে নেন। এ নিয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে আদালতে রিট দায়ের হলে তাকে পুনরায় আদালতের নির্দেশে ডিডি পদে পদায়ন করা হয়। বর্তমানে তিনি আছেন অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদ ঢাকা মেট্রো উত্তরের উপ-পরিচালক পদে। ঢাকা উত্তরের অধীনে মিরপুর এবং মোহাম্মদপুরে রয়েছে একাধিক বিহারি ক্যাম্প। এসব ক্যাম্প থেকে আবুল হোসেনকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে চলে মাদক কারবার। রাজধানীর এসব ক্যাম্পে দিনে কোটি কোটি টাকার মাদক বিক্রি হয়। রাজধানীর কয়েকটি ক্যাম্পে প্রকাশ্যে সিরিয়াল দিয়ে মাদক বিক্রির অন্তত ডজনখানেক ভিডিও রয়েছে। এই আবুল হোসেন অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গেও অশোভন আচরণ করেন বলেও অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা কামানোর অভিযোগ রয়েছে। গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরে আবুল হোসেন সাবেক ডিজি মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকীকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি নেন। অধিদপ্তরের নথিপত্রে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ রেকর্ড আছে।


বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ও উপ-পরিচালক (ঢাকা গোয়েন্দা) মো. রবিউল ইসলাম চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময়েই কাটিয়েছেন রাজধানীতে। এই কর্মকর্তা সবচেয়ে বেপরোয়া ছিলেন অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি মোহাম্মদ আতোয়ার রহমানের সময়। রবিউল তখন ঢাকা মেট্রো উত্তরে ডিডি ছিলেন। দু’জন একই এলাকার হওয়ার সুবাদে এই কর্মকর্তা তখন ডিজির প্রভাব খাটিয়ে পোস্টিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। এই কর্মকর্তা তখন প্রধান কার্যালয়ে গেলে সবাই আতঙ্কে থাকতেন। যেদিন তিনি সদরদপ্তরে যেতেন সেদিনই কোনো না কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করিয়ে দেয়া হতো। এখন তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের নাম ভাঙিয়ে একই কায়দায় বদলি বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে।


এ ছাড়াও অপর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপ-পরিচালক মো. হামিমুর রশীদ তার চাকরি জীবনের প্রায় ৯ বছর কাটিয়েছেন সদর দপ্তরে। এ ছাড়াও প্রাইস পোস্টিং পেয়ে মানিকগঞ্জে ১ বছর ও সম্প্রতি বদলি হয়ে পটুয়াখালীতে আছেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের দুই কমিটির একটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ও অন্য কমিটিতে সদস্য হিসেবে সহকারী পরিচালক তুষার কুমার ব্যানার্জি। তিনি এখন ঢাকা বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চাকরি করছেন। চাকরি জীবনে তিনিও বেপরোয়া। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং নিয়ে পকেট ভারী করছেন। তার বিরুদ্ধে ২টা মামলা চলমান রয়েছে। এর আগে তিনি মামলার তদন্তে তিরস্কৃত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে এই সিন্ডিকেটে জড়িত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সহকারী পরিচালক (স্টাফ অফিসার টু ডিজি) শাহীন মাহমুদ। ছাত্রজীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলেন। বর্তমানে ডিজিসহ আরও বেশ কয়েকজন ডিজির স্টাফ অফিসার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। সাবেক ডিজি মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী তার মাধ্যমে সমস্ত কাজকর্ম করাতেন। ডিজিদের আস্থাভাজন হওয়াতে তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। বড় বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গেও অনেক সময় খারাপ আচরণ করার অভিযোগ আছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের আরও অনেক নেতাই দাপট দেখিয়ে চলেন। অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়, ডিজিরা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইলে (০১৪০৪০৭×××০০) বলেন, তার ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে এই সংগঠনটি, এটি ঠিক নয়। সংগঠন আছে সত্যি, কিন্তু তিনি এ বিষয়ে অবগত নন। তাছাড়া এখন তো এই সংগঠনের কোনো কর্যক্রম নেই আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে থাকারও কথা নয়।
এদিকে মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি এমন প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

সূত্র জানায়, এখনো এ অধিদপ্তরের সবকিছু হয় বঙ্গবন্ধু পরিষধের মাধ্যমে। ৩১ সদস্যবিশিষ্ট এই বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা ঠিক করে কাকে কোথায় বদলি করা হবে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা কাউকে তোয়াক্কা করেন না।

জানা গেছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছত্রছায়ায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা দিনে দিনে হয়ে উঠছিলেন আরো বেপরোয়া। এ ছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে নিয়োগ দেয়া হতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী। এরপর প্রতিটি নিয়োগে পাঁচ থেকে ১০ লাখ করে নিয়ে সেই টাকা বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা পৌঁছে দিয়ে আসতেন স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর ফার্মগেটের বাসায়। এ ছাড়াও কর্মকর্তারা তাদের অবৈধ আয় থেকেও নিয়মিত মাসোহার দিতেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক বিভাগীয় মামলা। যার মধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়িতে আলোচিত পাঁচ কেজি হেরোইনের ভুল প্রতিবেদন দেয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এ ছাড়াও আট মাস আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যৌথ অভিযানে একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে দুই কোটি টাকার হেরোইন জব্দ করা হয়। এরপর সেই হেরোইন ঢাকার গেন্ডারিয়ায় রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে সেখানে অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন দিয়েছেন ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা। প্রতিবেদন সরাসরি মাদক না লিখে তিনি লিখেছেন, ‘মাদকসদৃশ বস্তু পাওয়া গেছে।’ এভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদকের বড় চালানে ভুল ও অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগ রয়েছে এই দুলাল কৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে।

এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ঢাকা গোয়েন্দা) মো. রবিউল ইসলাম। রবিউল চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময়েই কাটিয়েছেন রাজধানীতে। এই কর্মকর্তা সবচেয়ে বেপরোয়া ছিলেন মানিকগঞ্জের মোহাম্মদ আতোয়ার রহমান যখন মাদকের ডিজি ছিলেন। তখন ঢাকা মেট্রো উত্তরে ডিডি ছিলেন। একই এলাকার হওয়ার সুবাধে এই কর্মকর্তা তখন ডিজির প্রভাব খাটিয়ে পোস্টিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। এই কর্মকর্তা তখন প্রধান কার্যালয়ে গেলে সবাই আতঙ্কে থাকতেন। যেদিন রবিউল সদর দপ্তরে যেতেন সেদিনই কোনো না কোনো কর্মকর্তাকে পোস্টিং করিয়ে দেয়া হতো। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নাম ভাঙিয়ে একই কায়দায় পোস্টিং বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের দপ্তর সম্পাদক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (উত্তর) রাহুল সেন। ছাত্রজীবনে ছিলেন জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রাহুল দিনের বেশির ভাগ সময়েই কাটাতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসায়। মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে বদলি বাণিজ্য করে এই রাহুল সেন হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। মন্ত্রীর সাথে তার এতটাই সখ্য ছিল যে, রাহুল সেনের বিয়েতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার কাজকর্ম ফেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের দ্বিতীয় কমিটির সহসভাপতি ও উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. মেহেদী হাসান। ছাত্রজীবনে ছিলেন শহিদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি। চাকরি জীবনের শুরুতেই সহকারী পরিচালক (গভেষণা+প্রকাশনা) পদ থাকলেও তিনি ভাগিয়ে নেন সহকারী পরিচালক (লাইসেন্স) পদ। সদর দপ্তরে বসে সারা দেশের মদের বারের লাইসেন্সের দিতেন এই মেহেদী হাসান। প্রতিটি বার লাইসেন্সে পাঁচ থেকে আট লাখ টাকা করে নিতেন। এভাবে তিনি হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। পরবর্তীতে খন্দকার রাকিবুর রহমান মাদকের ডিজি হলে জড়িয়ে পড়েন বদলি বাণিজ্যে। চাকরি জীবনে মেহেদী হাসান একাধিক প্রাইস পোস্টিং পেয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে, ডিডি (গাজিপুর), ডিডি (বগুরা), এডি (ঢাকা গোয়েন্দা)।

এ ছাড়াও অপর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপপরিচালক মো. হামিমুর রশীদ তার চাকরি জীবনের প্রায় ৯ বছর কাটিয়েছেন সদর দপ্তরে। এ ছাড়াও প্রাইস পোস্টিং পেয়ে মানকিগঞ্চে এক বছর ও সম্প্রতি ট্রান্সফার নিয়ে পটুয়াখালী আছেন। একইভাবে এই সিন্ডিকেটে জড়িত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সংস্কৃতি সম্পাদক ও সহকারী পরিচালক (স্টাফ অফিসার) শাহীন মাহমুদ। ছাত্রজীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জয়েন সেক্রেটারি (১) ছিলেন। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি ও উপপরিচালক (অপারেশন) মো. বজলুর রহমান শুরু থেকেই চাকরি করছেন সদর দপ্তরে।

Share your comment :