এবার রাবি সমন্বয়কের চাঁদাবাজির গোমর ফাঁস
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০২:১২ AM , আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০২:১২ AM

কেলেংকারি যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সমন্বয়কদের। বছর যেতে না যেতেই তাদের নানান অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনায় বারবার মিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছেন তাঁরা। রাজধানীতে চাঁদাবাজির ঘটনায় আটক হওয়ার দুইদিনের মাথায় এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সাবেক সমন্বয়কের বিরুদ্ধেও পরোক্ষ চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তার এমন কর্মকান্ডের গোমর ফাঁস হওয়ায় সবর্ত্র আলোচনার ঝড় বইছে।
জানা গেছে, ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রীতিমত ঘটা করে টাকা আদায়ের রাস্তায় নেমেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তার বিরুদ্ধে এই আয়োজনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে আর্থিক অনুদান চেয়ে পাঠানো চিঠিকে ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’ মন্তব্য করে সুপারিশ করেন। এ নিয়ে ওঠে সমালোচনার ঝড়। দেখা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে, কোনোটিতে বাংলায়। চিঠির সঙ্গে অনুষ্ঠান এবং বাজেটের বিস্তারিত যুক্ত করে দেয়া হয়। বাংলায় করা একটি আবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব। এই উৎসবে রাজশাহীর শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মানিত সমন্বয়কবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো। আবেদনপত্রে সালাউদ্দিন আম্মার ছাড়াও স্বাক্ষর করেছেন কে এস কে হৃদয়। তিনি ‘৩৬ জুলাই মুক্তির উৎসবের অর্গানাইজার’ এবং ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার ডিরেক্টর ও কো-ফাউন্ডার। গত ৯ জুলাই তাদের প্রস্তাবনায় সুপারিশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব।
তিনি লিখেছেন ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে ২১ জুলাই একটি আবেদন করা হয়েছে। তারা ২৩ জুলাই ২ লাখ টাকা অনুমোদনও করেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, শুধু সালাউদ্দিন বলে নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সংগঠন, যারা গত এক বছরে এ ধরনের কাজের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তাদের ‘রিকমেনড’ করেছি। এটা আমার দায়িত্ব বলে মনে করি।
সমালোচনার পর ২৭ জুলাই ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন সালাউদ্দিন আম্মার। সেখানে তিনি বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ মিডিয়া ট্রায়াল’ হিসেবে দাবি করেছেন। জুলাইয়ের পর চাইলে কোটি কোটি টাকা ইনকাম করতে পারতেন উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, একটা বড় কনসার্ট করতে চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে। একটা প্রস্তাবনা রাবি প্রশাসনকে দেয়া হয়। তবে প্রশাসন জানায়, এখন টাকা নেই। তবে টাকা বাদে যেকোনো সহযোগিতা তারা দেবে। এরপর সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উপাচার্যের স্বাক্ষর নিয়ে প্রাইভেট কোম্পানি, ব্যাংক, নগর ভবন- এগুলাতে প্রস্তাবনা দেন।
সালাউদ্দিন লিখেছেন, আমি চেয়েছিলাম একবারে প্রোগ্রাম শেষে আপনাদের সবকিছু ক্লিয়ার করে দিতে। কিন্তু আমি আসলে আর নিতে পারতেছি না। এত অসুস্থতার মধ্যে একটা আয়োজন করতে চাচ্ছি, সেটা নিয়েও সমস্যা। এখন পর্যন্ত একই প্রপোজাল নিয়ে প্রায় ১৫টি ব্যাংকের হেড অফিসে যাওয়া হয়েছে, সবাই রিজেক্ট করেছে। শুধুমাত্র ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৫ হাজার টাকা, চেম্বার অব কমার্স ৩০ হাজার টাকা, নগর ভবন-২ লক্ষ টাকা। এই ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো বাজেট আমরা ম্যানেজ করতে পারিনি।
মঙ্গলবার আরেক স্ট্যাটাসে সালাউদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত ১৯টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছিলাম। এই আয়োজনের প্রতিটা টাকার হিসাব দিয়ে দেবো। আয়োজন শেষে সব ডকুমেন্টসের স্বচ্ছতা তুলে ধরবো। বিজয় উৎসব গত বছর করতে চেয়েছিলাম, পারিনি ফেনীর বন্যার কারণে। রাজশাহীর বিশেষ অবদান ছিল এই আন্দোলনে, তাই বিজয় উৎসবও হবে রাজশাহীতে।