ফের বিএসএফের অপতৎপরতা, কী হচ্ছে সীমান্তে?
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১০:২৬ AM , আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১০:২৬ AM

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৮ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ভোরে তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ নিয়ে মৌলভীবাজার জেলায় পুশইনের ঘটনায় মোট ৪৫২ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
এর মধ্যে বড়লেখা উপজেলা দিয়ে আটক হয়েছেন ৩৪১ জন, জুড়ী দিয়ে ১০ জন, কুলাউড়া দিয়ে ২১ জন, শ্রীমঙ্গল দিয়ে ১৯ জন এবং কমলগঞ্জ দিয়ে ৬১ জন। এছাড়া আরও কয়েক শতাধিক ব্যক্তি সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করলেও বিজিবি বা স্থানীয় প্রশাসনের হাতে ধরা পড়েনি।
৫২ বিজিবি সূত্রে জানা যায়, বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকার পাল্লাথল পুঞ্জি নামকস্থান হতে ৪৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক ভারত হতে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে পাহাড়ী এলাকায় ঘুরাঘুরি করাকালীন বিজিবির টহলদল কর্তৃক তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৫ জন, নারী ১৫ জন এবং শিশু ১৮ জন রয়েছেন।
বিজিবি জানায়, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তারা চিকিৎসা এবং কাজের উদ্দেশ্যে কুড়িগ্রাম ও যশোর জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে গমন করে। পরবর্তীতে তাদেরকে ভারতের বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশে পুশইন করানো হয়।
বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্ণেল মোহাম্মদ আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে তারা যশোর, বাগেরহাট, চাপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, বরিশাল এবং কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা বলে জানা যায়। আটককৃত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
গত কয়েক মাসে ২ হাজারের অধিক মানুষেকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বিজেপি সরকার বাংলাভাষীদের ধরে ধরে এনে পুশইন করছে বলে অভিযোগ তোলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া মুসলিম পরিচয়ের কারণেও অনেককে বাংলাদেশে পুশইন করা হচ্ছে।
এদিকে সীমান্তে পুশইন ইস্যুতে ভারতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশিদের প্রোপার চ্যানেলের মাধ্যমে ফেরত পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, সম্প্রতি সীমান্তে পুশইনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, এজন্য আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। বাংলাদেশিদের প্রোপার চ্যানেলের মাধ্যমে ফেরত পাঠানোর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেছি। আমরা উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরেছি। যথাযথ চ্যানেল ব্যবহার করলে আমরা আমাদের নাগরিক হিসাবে তাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে কোনো সুরক্ষা ঘাটতি নেই। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের বাহিনী সম্পূর্ণ সক্ষম ও প্রস্তুত।
এর আগে এমন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতে চিঠি পাঠানো হয়। এতে অবিলম্বে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে এ ধরনের পুশইন গ্রহণযোগ্য নয়।’ এদিকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পুশইন করায় বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মৌখিক ও লিখিতভাবে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। এছাড়া পুশইন রোধে বিজিবি সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল তৎপরতা বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ভারতের প্রচলিত আইন হলো, বিদেশ থেকে কেউ যদি পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া দেশটিতে প্রবেশ করে, তবে তাকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে। দেশটির বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলা হবে। মামলায় যদি সেই ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে তার সাজা হবে। সাজা শেষে আদালতের মাধ্যমেই তাকে নিজ দেশে (যে দেশ থেকে গিয়েছেন, সেখানে) ফেরত পাঠানো হবে। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ভারতীয়রা যে অধিকার পান, সেই একই অধিকার ভারতের মাটিতে থাকাকালীন বিদেশি নাগরিকরাও পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশি সন্দেহে ধরপাকড় বা তাদের পুশইন নিয়ে যা হচ্ছে, সেখানে তারা নিজেদের দেশের আইন এবং সংবিধানও মানছে না বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।