সংবাদ প্রকাশের জের

চট্টগ্রামে বিএনপি নেতার ইন্ধনে সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ

বিএনপি
  © সংগৃহীত

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কুতুবদিয়া চ্যানেলে অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে স্থানীয় বিএনপি নেতার ইন্ধনে এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। হামলার শিকার বেলাল উদ্দিন দৈনিক সময়ের আলো’র বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জানা গেছে, গত ৪ জুলাই বাঁশখালীর কুতুবদিয়া চ্যানেলে অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে বেলাল উদ্দিনের একটি প্রতিবেদন একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে কোস্ট গার্ডের অভিযানে দুটি ড্রেজার জব্দ, ৪ লাখ টাকা জরিমানা এবং এক মাঝিকে কারাদণ্ড দেওয়ার তথ্য ছিল। সংবাদের একাংশে বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও ছনুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন ড্রেজারের কথা উল্লেখ ছিল।

এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা মোড়ে বাঁশখালী উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরী, নিজাম উদ্দিন এবং রেজাউল হক চৌধুরীর অনুসারী মোহাম্মদ নুরুন্নবীসহ আরো কয়েকজন মিলে সাংবাদিক বেলাল উদ্দিনকে হামলা করে বলে অভিযোগ তার। হামলার সময় দুর্বৃত্তরা এই সংবাদের কথাই উল্লেখ করে এবং রেজাউল হক চৌধুরীর নাম নিয়ে প্রাণনাশেরও হুমকি দেয় বলেও জানান বেলাল। 

ভুক্তভোগী সাংবাদিক বেলাল উদ্দিনের অভিযোগ, এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা এবং তাকে কৌশলে ডেকে এনে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

আহত সাংবাদিক বেলাল উদ্দিন জানান, হামলাকারীদের একজন, নিজাম উদ্দিন, তাকে ফোন করে আন্দরকিল্লায় ডেকে নিয়েছিল। বেলাল উদ্দিন বলেন, “নিজাম উদ্দিন আমাকে ফোন করে বলে, তৈলারদ্বীপ সেতু কেন টোলমুক্ত হচ্ছে না, সেটা নিয়ে নিউজ করা দরকার। আমি আপনাকে কিছু তথ্য দেব, আপনি আন্দরকিল্লা আসুন। তার কথা অনুযায়ী আমি সেখানে পৌঁছানো মাত্রই আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। 

শুরুতেই "রেজাউল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিউজ করেছিস কেন? তোকে মেরেই ফেলব" এবং "তোর মতো সাংবাদিককে মেরে ফেললে কী হবে?"—এমন হুমকি দিয়েই তারা আমাকে ফিল্মি স্টাইলে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে" হামলার বর্ননা দিতে গিয়ে বেলাল উদ্দিন বলেন।

'মূলত আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই রাসেল গলা টিপে ধরে আর নিজাম আমার পকেটে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এটা শতভাগ পূর্বপরিকল্পিত হামলা। আমি এই ঘটনার বিচার চাই,” যোগ করেন বেলাল।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, ‘বেলাল আওয়ামী লীগের দোসর, এই কারণে তাকে ধরে পুলিশের কাছে তুলে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে পালিয়ে গেছে। তাকে পাবলিক মেরেছে।’ বেলাল উদ্দিন সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলার বাদী। সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত এই আন্দোলনের মামলার বাদী কীভাবে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ হন, সেই প্রশ্নের জবাবে নুরুন্নবী কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

জানা গেছে, অভিযুক্ত রেজাউল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পার অনুসারী। তাঁর পরোক্ষ ইন্ধনে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনসহ নানান অনিয়মের প্রভাব বিস্তার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাপ্পা বিএনপির প্রয়াত নেতা সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে।

সাংবাদিক বেলাল উদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা এটিকে শুধু একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা নয়, বরং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করার একটি সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। 

এদিকে হামলার শিকার সাংবাদিক বেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করতে চাইলে চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানা পুলিশ তা নিতে চাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। মামলা না নেওয়ার জন্য মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা পুলিশকে চাপ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ তার।

তবে বিষয়টি মিথ্যা বলে অস্বীকার করে কোতোয়ালী থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, "মামলা নেওয়ার জন্য আমরা বসে আছি। কেউ মামলা করতে চাইলে শতবার নিবো।"

তিনি বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ 

উল্লেখ্য ,২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি সাংবাদিক বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে রেজাউল হক চৌধুরী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। গত ৫ আগষ্টের পর অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।


মন্তব্য