ভারতীয় পানির আগ্রাসনে প্লাবিত ২৫ গ্রাম
- লালমনিরহাট প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৩২ PM , আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৩২ PM

বৃষ্টির পানি নিয়ে সেই পুরানো খেলায় মেতেছে ভারত। দেশটির পানি আগ্রাসনের শিকার হয়ে প্রতি বছরই প্লাবিত হয় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল। এবারও সেই পানি সন্ত্রাসের কবলে পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা লালমনিরহাট। ভারতের পাহাড়ী পানির তোড়ে প্লাবিত হয়ে এ জেলার ২৫টি গ্রাম ইতিমধ্যেই তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে, ভারত প্রতিবছরই বৃষ্টির সময় গেট খুলে দিয়ে পানি ঠেলে দেয় আবার শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনের সময় পানি আটকিয়ে রেখে মরুভূমি বানাতে চায় বাংলাদেশকে। পানির নায্য হিস্যা বন্দোবস্তে বছরের পর বছর ধরা চলা ভারতের এ রেওয়াজ খুবই পুরানো।
এবছরও সেই একই পথে হাঁটছে দেশটি। এবার ভারত তার অংশ গজলডোবা ব্যারেজের সবকয়টি গেট খুলে দিয়েছে। এরফলে লালমনিরহাট অংশে স্থাপিত তিস্তা ব্যারেজের বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে লালমনিরহাটে খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট। এতে তলিয়ে গেছে ১৮ ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম। বুধবার সকালে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হওয়ায় এসব গেট খুলে দেয়া হয়। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দশ হাজার পরিবার।
মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি ও দার্জিলিংয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে গজলডোবা ব্যারেজের সবকয়টি গেট খুলে দিয়েছে দেশটি। এতে তিস্তা ব্যারেজে পানির চাপ বেড়েছে। ব্যারেজ রক্ষায় তিস্তা বাঁধের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
এদিক তিস্তা বাঁধের ৪৪ টি গেট খুলে দেওয়ায় আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে মহিষ খোচা, কালমাটি, গোবরধন, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, তাজপুর, গোখুন্ডা, চর গোকন্ডা, হাতীবান্ধার, পারুলিয়া, সানিয়াজান, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি ও দহগ্রামসহ কয়েকটি এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। পরিবারগুলো উঁচু স্থান ও আশপাশের স্কুল-কলেজের মাঠে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে প্রথম দফায় কিছু ত্রাণ দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে অভিযোগ করেছেন পানিবন্দী মানুষেরা।
একইসঙ্গে পানিতে কৃষকের রোপা আমন ক্ষেত ও রোপা আমন বীজতলাসহ অন্যান্য ক্ষেত-খামার তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়িতে হাঁটু পানি। কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি-ঘর। পানিতে টিউবয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘আগামী দুই দিন পানি বৃদ্ধি পাবে। তবে ৪ থেকে ৫ দিন পর ধীরে ধীরে পানি নেমে যাবে।’
সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। যেকোনো সময় ত্রাণ প্রয়োজন হলে আমরা বিতরণ শুরু করব।’