পুরানো পথেই হাঁটছে র্যার, অভিযোগ আইএইচআরসি'র

র্যাব
  © সংগৃহীত

চট্টগ্রামে র্যাপিড এ্যকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-৭ ও সিপিসি-৩)  এর অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন (আইএইচআরসি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টার। সংস্থাটির অভিযোগ, র্যাব শেখ হাসিনার আমলের মতই সাজানো এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানী করছে। বাহিনীটির এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলেই পুরানো কায়দায় ক্রস ফায়ারের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। 

আজ বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) দুপুরের জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন (আইএইচআরসি)’র বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি এম এ হাশেম রাজু এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এম এ হাশেম রাজু বলেন, চলতি বছরের ১২ই জুন হঠাৎ করে র্যাব-৭, সিপিসি-৩ এর একটি দল কক্সবাজারের মাছ ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার ধর্মপুরের আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে হঠাৎ করেই একটি অভিযান চালায়। সেদিন চান্দগাঁও র্যাব ক্যাম্পের দায়িত্বরত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তাওহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল কোনো প্রকার তল্লাশি পরোয়ানা বা আদালতের আদেশ ছাড়াই সাতাকানিয়া থানার একটি ওয়ারেন্ট এর মোবাইল কপি নিয়ে আইয়ুব আলীকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে। প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী তল্লাশি অভিযানের নামে তার বাসায় তান্ডব চালায়। র্যাব সদস্যরা প্রথমে আইয়ুব ও পরে তার স্ত্রীকে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে বাসার এক কোণে অস্ত্র ঠেকিয়ে বসিয়ে রাখে। পরে আইয়ুবকে একটি জননিরাপত্তা আইনের মামলায় আসামি হিসেবে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

রাজু বলেন, কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াই একজন নাগরিককে এভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া একেবারেই অবৈধ ও প্রচলিত আইন পরিপন্থী। এ সময় র্যাব সদস্যরা আইয়ুবের ঘরে থাকা ৩৩ লক্ষ টাকা থাকলেও পরবর্তীতে জব্দ তালিকায় তারা মাত্র ১২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫০০ শত টাকা দেখায়। আইয়ুবের অভিযোগ, র্যাব সেখান থেকে ২০ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা লুট করে নেয়। কোনো রকম স্বাক্ষী ও প্রমান ছাড়াই একটি গায়েবি মামলা দিয়ে এরেস্ট করা মানবাধিকারের চরম লঙ্গন। কারণ পরের দিন ১৩ জুন বাকলিয়া থানায় দায়ের হওয়া মামলায় (নম্বর-২৩) বলা হয় আইয়ুবের বাসায় ২২৩ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে। যদিও সেটার কোনো জব্দ তালিকা ছিলনা। 

সংবাদ সম্মেলন আইয়ুব আলী অভিযোগ করে বলেন, সাতকানিয়ার স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. আবু তৈয়ব, তার ভাই শহিদুল ইসলাম বাবু (সিনিয়র সহ-সভাপতি, উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক উপজেলা, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ) এবং স্ত্রী মুন মুন র্যাব সদস্যদের প্রভাবিত করে এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পারিবারিক জমির বিরোধ ও রাজনৈতিক শত্রুতা থেকে প্রতিশোধ নেওয়া। আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে সি প্লাস নামের একটি ভুইফোঁড় চ্যানেল থেকে মিথ্যা প্রচারনাও চালানো হয়। র্যাব এর ভিত্তিতে আইয়ুব আলীকে গ্রেফতার করে। এ অবস্থায় নিজের জীবন ও পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন অভিযোগ করে আইয়ুব আলী বলেন, এভাবে চলতে থাকলে তাকে “ক্রসফায়ার” বা আরেকটি ভুয়া মামলায় ফাঁসানো হতে পারে। তিনি এর প্রতিকার চান। তিনি তার বিরুদ্ধে সাজানো ইয়াবা মামলা ও ২০ লক্ষ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করলে আরো মিথ্যা মামলা দিয়ে আজীবন আটক রাখাসহ ক্রস ফায়ারের হুমকির প্রতিবাদ ও আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত এবং সংশ্লিষ্ট র্যাব সদস্যদের শাস্তির দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত, আত্মসাৎ করা ২০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ফেরত, সাজানো মামলার প্রত্যাহার, স্ত্রীর সাথে অমানবিক আচরণের বিচার, ভবিষ্যতে যেন এমন অভিযান না হয়-সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা, নিজ ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ অপকর্মে জড়িত র্যাব সদস্যদের বিচার দাবী করেন আইয়ুব আলী। 

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে আইয়ুব আলী বলেন, শহিদুল ইসলাম বাবু স্থানীয়ভাবে পরিচিত একজন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা। তবে রাজনৈতিক পদ-পদবির আড়ালে তার আসল পরিচয় হলো সন্ত্রাসের লালনকারী, ওমরাহ ও হজ এজেন্সির আড়ালে কোটি কোটি টাকা পাচার, ওমরা হজ্জ উমরাহ নামে রোহিঙ্গা পাচার. মাদক (বিশেষ করে ইয়াবা) ব্যবসায় জড়িত। অথচ দেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পরও বাবু এখনো কিভাবে এখনো এত ক্ষমতাশালী? 

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন (আইএইচআরসি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আইনী সহায়তা সেলের প্রধান আইনজীবি মোঃ আব্দুল মোমেন চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী সংগঠক প্রফেসর ড. মালেক কাজী, প্রফেসর ড. ফেরদৌস আরা খান, এস এম ফরিদ, মোঃ কামাল উদ্দিন প্রমুখ। এছাড়াও ভুক্তভোগী আইয়ুব আলীর স্ত্রী লুৎফুন্নেছা গোলাপ ও বড় সন্তান মোঃ তারিকুল ইসলাম ফয়সাল।


মন্তব্য