আন্দোলনের জের: কাস্টমস কমিশনার জাকির বরখাস্ত
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৭ AM , আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫, ০১:১৭ PM

আন্দোলনের জেরে এবার বরখাস্তা হয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) মো. জাকির হোসেন। সরকারের নির্দেশ অমান্য করে নির্ধারিত দিনে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার দায়ে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার (০১ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন ২১ ও ২৮ জুন এনবিআর ও এর অধীনস্থ কাস্টমস এবং ভ্যাট ও আয়করসহ রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য সব দপ্তর খোলা রাখার নির্দেশনা অমান্য করেছেন। ২৮-২৯ জুন যথাক্রমে শনি ও রোববার কাস্টম হাউজ, চট্টগ্রাম বন্ধ রেখে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি করেছেন।’
এ কারণে তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৮ এর ধারা ৩৯(১) অনুযায়ী তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এই ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছে। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কাস্টমস হাউস এবং দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি এখান দিয়েই পরিচালিত হয়। আমদানির জন্য প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০-৪,৫০০ কনটেইনার (TEUs) চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়। মূল্য হিসেবে গড় ১,০০০-১,৫০০ কোটি টাকা সমমানের পণ্য আমদানি হয় (বিশেষ করে চাল, গম, ভোজ্যতেল, যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ইত্যাদি)।
রপ্তানি পর্যায়ে প্রতিদিন গড়ে ২,০০০-৩,০০০ কনটেইনার রপ্তানি হয়; যার গড় মূল্য প্রায় ৫০০-৮০০ কোটি টাকা সমমান (বস্ত্র, চামড়া, হিমায়িত মাছ, কৃষি পণ্য ইত্যাদি)।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৭০,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। বন্দরের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি মেট্রিক টন পণ্য লোড/আনলোড হয়।
উল্লেখ্য, এনবিআর সংস্কারের দাবিতে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ গত দুই মাস ব্যাপী আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এই সময়ে তারা কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি এমনকি শাটডাউনের মতো কর্মসূচিতে চলে যান। সর্বশেষ সরকার হার্ডলাইনে চলে গেলে তারা সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, এই আন্দোলনে প্রকাশ্যে ও নেপথ্যে থেকে যারা ইন্ধন জুগিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো এবং আজ বুধ ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদের মধ্যে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের বিরুদ্ধে দুদক পৃথকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এদের কেউ যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।