এনবিআরের কারণে শেষ মাসে হোঁচট খেল বাংলাদেশ!
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৪ AM , আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৪ AM

বছরজুড়ে রপ্তানি খাতে ছিল ইতিবাচক গতি, কিন্তু অর্থবছরের শেষ মাসে এসে সেই প্রবাহে হঠাৎ 'ব্রেক' পড়ে যায়। জুন মাসে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হোঁচট খায়। ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকায় মাসের শুরু ও শেষের কয়েক দিন রপ্তানি কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। এর প্রভাবেই জুনে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৪৪ দশমিক ৯৪৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরের শেষে, অর্থাৎ জুন শেষে মোট আয় দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ২৮৩৯ বিলিয়ন ডলারে। এতে করে পুরো বছরে রপ্তানি আয়ে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির চাপ, ইরান-ইসরায়েল ও ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনাসহ দেশি-বিদেশি নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে এক মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধস নেমেছে—মে মাসে রপ্তানি ছিল ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার, যা জুনে কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়নে। ফলে এক মাসেই আয় কমেছে ১ দশমিক ৩৯৯৯ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে কারখানা বন্ধ ছিল। আর মাসের শেষে এনবিআরের কর্মবিরতির কারণে বন্দরের গেট ছিল বন্ধ। তাঁরা প্রশ্ন রেখে বলেন, “এই সময় বন্দরে অপেক্ষমাণ কার্গোতে রপ্তানি পণ্য লোড হবে কীভাবে এবং রপ্তানি গন্তব্যে যাবে কীভাবে?”
গত ২৬ ও ২৭ জুন এনবিআরের কমপ্লিট শাটডাউনে আমদানি-রপ্তানি কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে বন্দরে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ জমে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগে এমন ছুটি ও শাটডাউনের যুগলবন্দী খুব একটা দেখা যায় না। পোশাকমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার কারখানায় জুনে রপ্তানি কমেছে। ছুটি না থাকলে এই মাসে (জুন) রপ্তানি আয় মে মাসকে ছাড়িয়ে যেত।’
মোহাম্মদ হাতেম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আরও কয়েক মাস হয়তো চলবে। কিন্তু এরপর ধাক্কা লাগবে। কারণ, অর্ডার নিতে হচ্ছে লোকসানে। কারখানা চালু রাখতে বাধ্য হচ্ছি কমদামে কাজ নিতে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। আরও হবে।”
রপ্তানিতে সবচেয়ে বড় খাত পোশাকশিল্প। সেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। কৃষিপণ্যও মন্দ নয়—২ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য ছুটছে—প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। তবে কাচজাত পণ্য রপ্তানিতে ভরাডুবি হয়েছে। এ খাতে ৩৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। অন্যদিকে পাটজাত পণ্যে রপ্তানি আয় কমেছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে এত হুলুস্থুলের মধ্যেও সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, সারা বছরের মোট রপ্তানি আয় বেড়েছে। গত বছরের ৪ হাজার ৪৪৬ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের চেয়ে এবার বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “দেশ ও বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকলে রপ্তানির ধারা ভালো থাকবে। তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ, ট্রাম্পের শুল্কনীতি—সবই প্রভাব ফেলতে পারে।”
বাংলাদেশ অ্যাপারেলস এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, “ইউরোপে খুব একটা পরিবর্তন হবে না। ভালো অর্ডার আসছে। আশা করছি, ইতিবাচক ধারা থাকবে।”