রেকর্ড বিল পরিশোধ, রিজার্ভের যে হাল
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪০ PM , আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪০ PM

বাংলাদেশ ব্যাংক এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে ও জুন মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে। তবে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় এই পরিশোধ সত্ত্বেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আকুকে রেকর্ড ২ বিলিয়ন (২০১৯ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মূলত মে-জুন মাসে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমদানি লেনদেন বাবদ গৃহীত পণ্যের অর্থ পরিশোধে এই বিল দেওয়া হয়। আকুর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে লেনদেনের জন্য দুই মাস পরপর এ ধরনের বিল পরিশোধ করতে হয়।
গত মাস শেষে রিজার্ভ ছিল ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। আকুর ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর তা ২৯ বিলিয়নে নেমে এলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আজ আকুর বিল হিসেবে ২০১৯ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। তবুও রিজার্ভে বড় ধরনের চাপ পড়েনি। এখন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় গ্রহণযোগ্য ও স্থিতিশীল। এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানির ইতিবাচক ধারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ইতিহাসে ২০২২ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। এর পর আওয়ামী সরকারের সহায়তায় কয়েকটি ব্যক্তি ও গোষ্ঠি ব্যাপকভাবে অর্থ পাচার করতে থাকে। যার কারণে রিজার্ভে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়। প্রতি মাসে রিজার্ভ কমতে–কমতে সরকার পতনের আগে গতবছর জুলাই শেষে তা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। তবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করে অর্থ পাচার রোধে কঠোর হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিগত সরকারের রেখে যাওয়া প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া পরিশোধ করার পরও গ্রহণযোগ্য অবস্থায় রয়েছে রিজার্ভ।
সবশেষ চলতি মাসের ৭ জুলাই শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯৫৩ কোটি ডলার বা ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি বা ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা সবসময়, প্রকাশ করা হয় না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৩ কোটি মার্কিন ডলার (২০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার)। আকুর বিলের দুই বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে এখন নিট রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি আছে।
প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করে এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।