ওয়াশিংটনের দিকে তাকিয়ে দেশের ব্যবসায়ীরা
- বাংলাকণ্ঠ ডেস্ক:
- প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:৫০ AM , আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:৫০ AM
-11059.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকার ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিখাত এক ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। অর্থনীতি, বাণিজ্য ও রাজনৈতিক মহলে এখন সবার দৃষ্টি ওয়াশিংটনের দিকে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দফতর (ইউএসটিআর)-এ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা শুরু হয়েছে, যা চলবে কয়েকদিন ধরে।
এর আগে, গত ৮ জুলাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে আমদানি হওয়া সব পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রশাসন। তিনি চিঠিতে আরও ইঙ্গিত দেন, আলোচনার পথ খোলা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রকে তার কঠোর অবস্থান থেকে সরাতে হলে বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উন্নয়নে নমনীয়তার বার্তা দিতে হবে।
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানে অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ সরকার। দেশের ব্যবসায়ী মহলে দেখা দিয়েছে তীব্র উদ্বেগ। তৈরি পোশাকসহ প্রধান রপ্তানি খাতগুলোতে আশঙ্কা ছড়িয়েছে বৈদেশিক ক্রয়াদেশ হারানো, প্রতিযোগী সক্ষমতা এবং উৎপাদন হ্রাসের।
স্থানীয় অর্থনীতিবিদদের অনেকেই অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে অন্যায্য দাবি করে বলেছেন, এটা আসলে এক ধরনের চাপে রাখার কৌশল। এর মাধ্যমে একতরফা মার্কিন সুবিধা নেওয়ার পথ প্রশস্ত করে রাখা হয়েছে।
গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় বহুল প্রতীক্ষিত ‘সিঙ্গেল কান্ট্রি ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকে মুখোমুখি বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। এতে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, যিনি আগে থেকেই ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরাও আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। গতকাল গিয়ে সেই দলে যোগ দেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
দেশ থেকে ভার্চুয়ালি এ বৈঠকে যোগ দেন গত কিছুদিন ওয়াশিংটনে কাটানো জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও।
এই আলোচনার বেশিরভাগ বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় এক ফেসবুক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা জানান, 'বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ইস্যু নিয়ে আলোচনার প্রথম দিন শেষ হয়েছে। কাল, পরশুও আলোচনা চলবে। যুক্তি-তর্কে অধিকাংশ বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছে। তবে এখনই শুল্ক ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না।'
এদিকে বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মার্কিন ক্রেতারা নতুন অর্ডার নিয়ে আলোচনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি যেসব পণ্যের চালান ইতোমধ্যে প্রক্রিয়াধীন, সেগুলোর ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক আরোপ হলে অতিরিক্ত খরচের একটি অংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিতে বলছেন তারা।
বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, নতুন এই শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এতে করে মার্কিন বাজারে প্রবেশের সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগের প্রায় ১৬ শতাংশের সঙ্গে নতুন ৩৫ শতাংশ যোগ হয়ে মোট শুল্ক দাঁড়াতে পারে প্রায় ৫১ শতাংশ।
শিল্পখাতের নেতারা আশঙ্কা করছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজার, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, নতুন শুল্ক নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে যেসব পণ্যের অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে কিন্তু এখনও পাঠানো হয়নি, সেগুলোর খরচ ভাগাভাগি নিয়ে ক্রেতারা নতুন করে আলোচনা শুরু করায় এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
২০ শতাংশের বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি করা এক গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বুধবার আমাদের মিটিং হয়েছে। তারা পাইপলাইনে থাকা অর্ডারে ট্যারিফের কারণে বাড়তি টাকার একটি অংশ বহন করার জন্য আমাদের বলছে।'
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য পাইপলাইনে থাকা মোট ক্রয়াদেশের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারের মতো হতে পারে।