পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি
স্বপ্ন দেখাচ্ছে অপ্রচলিত বাজার
- বাংলাকণ্ঠ ডেস্ক:
- প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৭ AM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৭ AM
-11311.jpg)
পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি; স্বপ্ন দেখাচ্ছে অপ্রচলিত বাজার
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপের মাঝেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে বাংলাদেশ ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এ খাত থেকে মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন পরিস্থিতিতে অপ্রচলিত বাজারগুলো বাংলাদেশের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, এসব বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। তবে রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও মালয়েশিয়ার মতো কয়েকটি দেশে রপ্তানি কিছুটা কমেছে। তাই নতুন ও উদীয়মান বাজারগুলোর প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।
ইপিবির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখনও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এই বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ১৯ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট আরএমজি রপ্তানির ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। কানাডা ও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার এবং ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
আলাদাভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইইউ বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং কানাডায় ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাজ্যে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি, যেখান থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে স্পেন (৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার), ফ্রান্স (২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার), নেদারল্যান্ডস (২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার), পোল্যান্ড (১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার), ইতালি (১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার) এবং ডেনমার্ক (১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার)।
কিছু ইউরোপীয় দেশে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যেমন নেদারল্যান্ডসে ২১ দশমিক ২১ শতাংশ, সুইডেনে ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ, পোল্যান্ডে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং জার্মানিতে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এদিকে নন-ট্র্যাডিশনাল বা অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের সার্বিক আরএমজি রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ; মোট রপ্তানি আয় এসেছে ৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই বাজারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত। এর মধ্যে তুরস্কে রপ্তানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, ভারতে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং জাপানে রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
তবে, উদ্বেগ তৈরি হয়েছে রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় বাজার ঘিরে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে এ বাজারগুলোতে। এর মধ্যে রাশিয়ায় রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৩২ মিলিয়ন ডলারে এবং মালয়েশিয়ায় ১১ দশমিক ২১ শতাংশ কমে ১৮৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে রপ্তানি আয়। তবে এসব অঞ্চলে আবারও প্রবেশের সুযোগ রয়েছে যদি বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কম দামে পোশাক সরবরাহ করে এ বাজারে টিকে থাকা যাবে না। বরং উচ্চ মানসম্পন্ন ও নতুন ডিজাইনের পোশাক, টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা এবং সাশ্রয়ী অথচ পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া— এসবই হতে হবে ভবিষ্যতের মূল প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের চাহিদা ও বাস্তবতা দ্রুত বদলে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ট্র্যাডিশনাল বাজারগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছে, যেখানে মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই এই বাজার থেকে আসে। তবে, নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের অংশীদারিত্ব এখনো তুলনামূলক কম, যা মাত্র ১৬ শতাংশ।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক পোশাক বাজারের আকার ছিল প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের আকার ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে ৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব ধরে রেখেছে, যেখানে আরও বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪ সালে জাপানের মোট পোশাক আমদানির ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার মোট আমদানির ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ হয়েছে বাংলাদেশ থেকে; যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সম্ভাবনা নির্দেশ করে।