শুল্ক নিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন আলোচনার সমাপ্তি; যা জানা গেল
- বাংলাকণ্ঠ ডেস্ক:
- প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০:১৬ AM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০:১৬ AM

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার তিন দিনব্যাপী বহুল প্রত্যাশিত শুল্ক আলোচনা কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে মতবিরোধ থাকায় আলোচনার সুস্পষ্ট অগ্রগতি এখনো দেখা যাচ্ছে না। এতে করে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক হ্রাসের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণে ব্যবসায়ীদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউএসটিআর-এর নেতৃত্বে কৃষি, পরিবেশ, মেধাস্বত্ব ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি অংশ নেন।
আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “দ্বিপক্ষীয় আলোচনাটি মোটের উপর সফল। মার্কিন প্রস্তাবের ৮০ শতাংশ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। তারা আমাদের অবস্থানে সন্তুষ্ট। তবে কয়েকটি মৌলিক ইস্যুতে এখনো মতৈক্য হয়নি।”
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে যেসব দাবি এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে—মার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করা, মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া এবং শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা কমানো। এছাড়া কৃষিপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, গম, তুলা, এলএনজি, ভোজ্যতেল, যানবাহন, বোয়িং বিমান ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রস্তাবেও বাংলাদেশ সম্মতি দিয়েছে।
তবে আলোচনায় কিছু স্পর্শকাতর শর্তে বাংলাদেশ আপত্তি তুলেছে। যেমন—যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দেশকে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে বাংলাদেশকেও তা মেনে চলতে হবে, কিংবা যেসব মার্কিন পণ্যকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে, সেগুলো অন্য কোনো দেশকে না দেওয়ার শর্ত। এসব বিষয় বাংলাদেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয় বলেই জানানো হয়েছে।
এছাড়াও মার্কিন প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশের চীন ও ভারতের সঙ্গে অতিমাত্রার বাণিজ্যিক নির্ভরতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়াচ্ছে। জবাবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে যে, বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় তারা আন্তরিক এবং ইতোমধ্যে পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
তবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশকে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়—এ কারণে একতরফা শর্ত পূরণ সব সময় সম্ভব নয়।
সংলাপের শেষে ইউএসটিআরের প্রতিনিধিরা আলোচনা সংশ্লিষ্ট সব বিষয় লিপিবদ্ধ করেছেন এবং তা হোয়াইট হাউসে পাঠানো হবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তজা বলেন, “আলোচনাটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট আলোচনা হয়েছে। এখনো কিছু বিষয় অসমাপ্ত থাকলেও আলোচনা আবার শুরু হবে—তা সরাসরি নাকি ভার্চুয়ালি, তা দু-এক দিনের মধ্যেই নির্ধারণ হবে।”
সব মিলিয়ে, আলোচনার ফল এখনো অনিশ্চিত হলেও, বাংলাদেশ মার্কিন আগ্রহের বেশিরভাগ প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ায় একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির পথ কিছুটা সুগম হয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।