আমানতে ভোগান্তি; তদারকিতে বাংলাদেশ ব্যাংক
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৮ AM , আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৮ AM

নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিমাত্রায় ঋণ বিতরণের কারণে গভীর সংকটে পড়েছে দেশের ব্যাংক খাত। অর্থঋণ আদালতে বর্তমানে প্রায় ২ লাখ ৪ হাজার মামলা বিচারাধীন, যেখানে আটকে রয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ। এই পরিস্থিতির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সাধারণ আমানতকারীরা, যারা প্রয়োজনের সময় নিজেদের জমানো অর্থ তুলতে গিয়েও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বহু আমানতকারী এখন বাধ্য হচ্ছেন ব্যাংকে টাকা রেখে মাসে মাসে সীমিত পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করতে। এতে বারবার ব্যাংকে যেতে যেমন সময় ও ভোগান্তি বাড়ছে, তেমনি বাড়তি খরচও গুনতে হচ্ছে। অথচ ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে এসব সমস্যার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা মিলছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও ব্যাংকগুলোর আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা, যা এখনো আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক ঋণগ্রহীতা আইনের সুযোগ নিয়ে জুডিশিয়াল রিভিউর মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করছেন। এতে সুদ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ঋণ আদায় আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠানের ফরেনসিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শরিয়াভিত্তিক অনেক ব্যাংকে অনাদায়ী ঋণের হার প্রকৃতপক্ষে ৯০ শতাংশের বেশি, যদিও তারা তা ২০-৪০ শতাংশ বলে দেখিয়ে আসছিল।
খেলাপি ঋণ গ্রহণকারীরা একাধিক ব্যাংক থেকে বারবার ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন আইনি সুবিধা গ্রহণ করছেন। অথচ এর মাশুল দিতে হচ্ছে আমানতকারীদের। আইনজীবীদের মতে, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (ADR) ব্যবস্থা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় মামলার দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ছে, যা ঋণ পুনরুদ্ধারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ব্যাংকগুলো যেন দ্রুত অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তি করে ঋণ আদায়ে সক্রিয় হয়, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি করছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “ক্ষতির দায় শেষ পর্যন্ত ব্যাংককেই বহন করতে হয়। তাই গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই।”
বর্তমানে ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও ৬টি বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট খেলাপি ঋণের ৭১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেনসিক রিপোর্ট ব্যাংক খাতে সংস্কার ও স্বচ্ছতা ফেরাতে বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।