'তৈরি পোশাক খাতের সামনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ'

শুল্ক
  © ফাইল ছবি

শুল্ক কমালেও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সামনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক কৌশলের মাধ্যমে মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন বিজিএমইএ পরিচালক ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তা ফয়সাল সামাদ।

তিনি বলেন, এই শুল্ক কেবল একটিমাত্র সিদ্ধান্ত নয়—এটা বৈশ্বিক বাণিজ্যের একটি দিক পরিবর্তনের সংকেত। আমাদের এখন দরকার কৌশলগত প্রস্তুতি এবং ক্রেতাদের সঙ্গে নতুনভাবে আলোচনায় নামা।

ফয়সাল সামাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত এপ্রিল মাসে যে নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন, তা বৈশ্বিক বাণিজ্যকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। যদিও শুল্কহার তুলনামূলকভাবে ভারতের চেয়ে কম এবং ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার প্রায় সমান, তবুও বাংলাদেশি রপ্তানির ওপর এর প্রভাব ইতোমধ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, শুল্কের এ পরিবর্তন পোশাক শিল্পের সামনে একদিকে যেমন ঝুঁকি তৈরি করছে, অন্যদিকে এটি আমাদের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনায় নতুন দিকনির্দেশনাও দিচ্ছে।

চীনের প্রসঙ্গ টেনে সতর্ক বার্তা দিয়ে ফয়সাল সামাদ বলেন, যদিও চীনের ওপর সবচেয়ে বেশি শুল্ক বসানো হয়েছে, তবুও তাদের রপ্তানি তেমন কমেনি। বরং তারা নতুনভাবে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে। আমরা যদি তাদের মতো প্রস্তুতি না নেই, তাহলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পর শুরুতে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকলেও এখন বিজিএমইএ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে একটি যৌক্তিক কৌশল নির্ধারণে কাজ করছে বলে জানান তিনি। সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ, স্টেকহোল্ডারদের মতামত এবং বোর্ড সদস্যদের আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর রূপরেখা তৈরি হচ্ছে।

ফয়সাল সামাদের মতে, পোশাক খাতের প্রতিদিনের কার্যক্রমে এখন থেকে কস্ট অপটিমাইজেশন, দরকষাকষি এবং তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, শিল্প মালিক, সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজ—সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যদি আমরা সম্মিলিতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাহলে এই শুল্ক প্রতিবন্ধকতা না হয়ে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

তিনি বিজিএমইএ বোর্ডের পক্ষ থেকেও আশ্বাস দেন, খাতটির সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো তথ্য ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে মোকাবিলার প্রস্তুতি চলছে, এবং সে অনুযায়ী ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ প্রণয়নের কাজও এগিয়ে চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের ওপর নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। ১ আগস্ট থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসানো হয়েছে। এর সঙ্গে আগে থেকেই থাকা গড় ১৫ শতাংশ শুল্ক মিলিয়ে এখন মোট ৩৫ শতাংশ শুল্কে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে।

এর আগে গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেছিল, যা ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। আলোচনার সময়সীমা শেষ হওয়ার পর এবার তা কার্যকর করা হলো।

একই আদেশে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।


মন্তব্য