ব্যাংকিং খাতে আমূল পরিবর্তন
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০১:১৩ PM , আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০১:১৩ PM
-10324.jpg)
ব্যাংকিং খাতে আসছে বড় পরিবর্তন আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো একীভূত করা হবে, যাতে একটি সুদৃঢ়, সংগঠিত ও স্বচ্ছ ব্যাংকিং খাত গঠিত হয়। সরকারের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারে তিনি ছয়টি নতুন আইন আনবেন, যা ইতিমধ্যে রূপ নিয়েছে। ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও ব্যাংক কোম্পানি অ্যাক্ট সংশোধনের কাজ চলছে।
নতুন আইন অনুযায়ী পরিচালক বরাতে একটানা ১২ বছর চলমান ‘পরিচালকের আসন’ আবশ্যিকভাবে ছয় বছরে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা ৫০% করার পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা পরিবারতন্ত্র কমাতে এবং পরিচালনায় আরও স্বচ্ছতা আনতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে আর ব্যক্তিগত লকার থাকবে না —এমন ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যক্তিগত লকার রাখার প্রথা আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি। তবে কিছু লকার বর্তমানে ফ্রিজ করা থাকায় আইনি জটিলতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। ফ্রিজ উঠলেই লকার সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে—এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত লকার ব্যবহারের জন্য জনগণকে বেসরকারি ব্যাংকে যেতে হবে, যেটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত একটি পদ্ধতি।"
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত আর্থিক মানদণ্ডে আমাদের ব্যবস্থাকে আনতে ঋণসমূহের শ্রেণিকরণ ও পরিশোধ সময়সীমা পুনর্গঠন করা হয়েছে। অতীতে ছয় ও নয় মাসের ভিত্তিতে ঋণ মান পর্যালোচিত হতেন; এখন তিন মাসে সীমিত করে ঋণ মান নির্ধারণ করা হচ্ছে—যার ফলে ঋণদানের মনোভাব বদল আনবে।
হাইকোর্টের রিটের কারণে ব্যাংকের অনেক অর্থ আটকে রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক সেক্টরে প্রতিকূল প্রভাব ফেলছে। গভর্নর বলেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয় এবং পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের স্থগিতাদেশ নাই বলে তিনি এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
১৫ বছরের বেশি পুরনো ও অনশোধিত ঋণ পুনর্বিন্যাসের সুযোগ বন্ধ করতে, আইনগতভাবে ব্যাংক রেজুলেশন বিভাগ গঠন করা হয়েছে। এই বিভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ভেঙে একীভূতকরণ, পরিচালনা বা প্রয়োজনে পুনঃমূল্যায়ন করা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
চারটি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করে পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১টি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে; এছাড়াও তথ্যসমৃদ্ধ ভিত্তিতে আরও মামলা গ্রহণমুখী পরিকল্পনা চলছে।
ডলার সংকট কাটিয়ে ৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ধরে রাখা হয়েছে, ফলে মুদ্রানীতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসলে সুদের হার কমানোর প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও দেশের বড় কয়েকটি ব্যাংক বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে; যেকোনো অনিয়ম হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্র পুননির্ধারণ করা হয়েছে।
এই প্রতিশ্রুতিমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের ব্যাংকিং খাত রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত চাপ থেকে মুক্ত হবে এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা শক্তিশালী হবে।