গতি ফিরেছে অর্থনীতির, তবে...
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৫৮ PM , আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৫৮ PM
-11300.jpg)
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) শেষে দেশের অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গেলেও কাঠামোগত সমস্যা এখনও অর্থনীতির গতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) মঙ্গলবার প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি সংকুচিত হওয়া এবং বিনিয়োগে ধীরগতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ করে দিয়েছে। তবে, প্রবাসী আয়, রপ্তানি এবং বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সহায়ক হয়েছে। ব্যাংক খাতে দুর্বল শাসনব্যবস্থা ও ঋণ অনিয়ম এখনও প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথকে কঠিন করে তুলেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণ করে এমসিসিআই জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৮৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা আগের তৃতীয় প্রান্তিকের ৪.৪৮ শতাংশের থেকে কিছুটা বেশি। জুন মাসে মুদ্রাস্ফীতি সামান্য কমে ৮.৪৮ শতাংশে নেমেছে, যদিও বছরের গড় মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে, যা জনগণের ক্রয়ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত অর্থবছরে ২.২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা কর আদায় করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
রপ্তানি আয় ৮.৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, যা আগের বছর ৪৪.৪৭ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। রপ্তানির বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার, সে হিসাবে অর্জন হয়েছে ৯৬.৫৭ শতাংশ। বিপরীতে আমদানির পরিমাণ ৫.৩১ শতাংশ বেড়ে ৬৩.৯৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
প্রবাসী আয় গত অর্থবছরে ২৬.৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৩২ কোটি ৭৫ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। সরকারি প্রণোদনা ও সহজীকৃত নীতিমালা প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বাড়াতে সহায়তা করেছে। তবে উন্নয়ন সহযোগীদের বৈদেশিক সাহায্য ১৬.৬৩ শতাংশ কমে ৮.৫৭ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে, যা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে বৈদেশিক সাহায্য ছিল ১০.২৮ বিলিয়ন ডলার। এ সময় সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও ৫৮.৪৩ শতাংশ কমে ৮.৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এমসিসিআই জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১৭.০৪ শতাংশ বেড়ে ১.৫৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, তবে এটি উন্নয়নশীল দেশের গড়ের তুলনায় এখনো কম। চলতি হিসাবের ঘাটতি উল্লেখযোগ্য হারে কমে ৪৩২ মিলিয়ন ডলার হয়েছে, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬.১২ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স বেড়ে ২৮.৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা হ্রাস পায়। তবে সেবা খাতে ঘাটতি বেড়ে ৪.৬০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। সামগ্রিক চলতি হিসাবের ঘাটতি ১.১৫ বিলিয়ন ডলারে নামায় অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিস্তৃত মুদ্রার প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালের মে মাসে ৭.৮৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার (৭.৮০ শতাংশ) কাছাকাছি। ২০২৪ সালের মে মাস শেষে বিস্তৃত মুদ্রার প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৩৫ শতাংশ। তবে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ায় বিনিয়োগে চাপ অনুভূত হচ্ছে। মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার মান ৩.৮৯ শতাংশ কমেছে। এতে রপ্তানিতে সুবিধা পাওয়া গেলেও আমদানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য উল্লেখ করে এমসিসিআই জানায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মেলেনি। ২০২৫ সালের ৩০ জুন দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সর্বোচ্চ চাহিদা ১৪,৭৯৯ মেগাওয়াটের বিপরীতে ১৫,৪১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতির কারণে সেদিন ৭৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৬,৬০৩ মেগাওয়াট।