বিনিয়োগ সম্মেলনে কী বললেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা?
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯:২৪ AM , আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৯ AM

দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে এই ‘বিদেশি বিনিয়োগকারী সম্মেলন ২০২৫’-এর আয়োজন করে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অস্থিরতার সামান্য ইঙ্গিত পেলেই চলে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার: প্রবৃদ্ধি ও সুযোগের অজানা কাহিনি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সম্মেলনে দুটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। পরে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট: বিকাশ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাপানি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কনটেক্সচুয়াল ইনভেস্টমেন্ট এলএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকাও হিরোসে। তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুত মুনাফার খোঁজে থাকা আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারী, একই সঙ্গে খামখেয়ালিও। যদি আমাদের বাজারে ধরে রাখতে চান, তবে সহিংসতা করবেন না। দয়া করে কোনো সহিংসতা নয়। যদি দেখি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে, আমরা জাপানে ফিরে যাব (জাপানি বিনিয়োগকারীদের দিকে ইঙ্গিত করে)। মতবিরোধ (রাজনৈতিক) থাকতেই পারে, তবে সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুন।’
তাকাও হিরোসে আরও বলেন, ‘বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাংলাদেশে ঢুকলে তা প্রবৃদ্ধিকে টার্বোচার্জারের মতো ত্বরান্বিত করতে পারে, কিন্তু একই সঙ্গে এটি ভয়ানকভাবে বিঘ্নকারী নেতিবাচক শক্তি হতে পারে। কারণ, অস্থিরতার সামান্য ইঙ্গিত পেলেই আমরা চলে যাব।’
বাংলাদেশে চমৎকার প্রবৃদ্ধি এসেছে উল্লেখ করে তাকাও হিরোসে বলেন, ‘বাংলাদেশকে এখন পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। সেটি হলো দীর্ঘমেয়াদি মূলধন, অর্থাৎ ইকুইটি মূলধন। আমাদের মতো ইকুইটি বিনিয়োগকারীদের আনতে চাইলে সঠিক কাঠামো, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে কাজ করুন, আমরা আপনাদের সমর্থন করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছেন বাংলাদেশের বাজার “শকপ্রুফ”। এর মাধ্যমে আপনারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের “অস্থিতিশীল” প্রভাবকে হেলাফেলা করছেন। বাজার খুলে দিলে আপনারা ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি পাবেন, কিন্তু বিনিময়ে হয়তো মূলধন বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে, যা খুবই বিপজ্জনক। তাই এর মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী ও গভীর দেশীয় বিনিয়োগ ভিত্তি তৈরি করতে হবে।’
সম্মেলনে এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ফান্ড ম্যানেজার রুচির দেশাই বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি কমছে, রেমিট্যান্স শক্তিশালী, রপ্তানি ফিরেছে, চলতি হিসাব সচ্ছল; বাংলাদেশের সব ইতিবাচক সূচক রয়েছে। বাংলাদেশের স্টক মার্কেট পুনর্মূল্যায়নের জন্য ইতিবাচক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। অনুমান করি, নির্বাচনের পরে বিনিয়োগকারীর আস্থা আরও বাড়বে।’
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ গণ-অভ্যুত্থান কিংবা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের পরও জিডিপিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। মূল্যস্ফীতি উল্টো হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক সাফল্যে এটা স্পষ্ট, দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। গত মাসে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের উত্থানে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। যে পুঁজিবাজার একসময় লুটপাটের শিকার হয়েছিল, সেই বাজারে এক মাসে এমন উত্থান ঘটেছে। এটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
সরকারের লক্ষ্য ও প্রচেষ্টা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর শক্তিশালী ও সুশাসিত পুঁজিবাজার গড়ার জন্য কাজ করছে। ‘তিন শূন্য’: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য অর্জনে এই প্রচেষ্টা।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখন ভালো সুযোগ। আমাদের পুঁজিবাজারও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত।’
সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি কোনো শুরুর পর্যায়ে নেই। স্বাধীনতার পর আমরা একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে, কমান্ড ইকোনমি থেকে বাজার অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছি। অনেক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত।’ তিনি বলেন, ‘গত দেড় দশকের অস্থিরতা ও গণ-অভ্যুত্থান সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কারণ, আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী। আমরা বাজার অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছি। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং বেসরকারি খাত-নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশই চালু করেছে।’