ঝুঁকিতে শিল্পকারখানা

ঝুঁকি
  © ফাইল ছবি

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পলায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের রাজত্ব। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশের বেসরকারি বিনিয়োগে ধীরগতি চলছে। পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে প্রত্যাশিত বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনক হারে কমে ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। চলতি বছরের জুনের শেষে এ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬.৪ শতাংশ, যা ২০০৩ সালের পর সর্বনিম্ন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি এলসি ২৫ শতাংশের বেশি কমে গেছে। রাজস্ব আদায়ে অগ্রগতি নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যে ও বিনিয়োগে একধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। সরকারের বিদেশি দেনা পরিশোধ গত অর্থবছরে ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা অর্থনীতিকে চাপে ফেলছে। ঝুঁকিতে পড়েছে শিল্পকারখানা। 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলারের সংকট, তারল্য ঘাটতি, খেলাপি ঋণের উচ্চ প্রবণতা এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট- সব মিলিয়ে বিনিয়োগের পরিবেশ অনুকূল নয়। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, ঋণের চড়া সুদ এবং কর-ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৬ শতাংশ ছুঁয়েছে, যা নতুন উদ্যোগ নেয়ার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে এনবিআর শতাধিক পণ্যে ভ্যাট ও কর বাড়িয়ে দেয়, ফলে উৎপাদন আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। বাজারে চাহিদা সংকুচিত, মুনাফার পথ সংকীর্ণ, আর নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাসে বৈদেশিক বিনিয়োগ ২৭৭ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক। দেশীয় বিনিয়োগ সামান্য বাড়লেও একই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমেছে মাত্র ৬.৪ শতাংশে, ২০০৩ সালের পর যা সর্বনিম্ন। মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে এলসি খোলা কমেছে ২৫ শতাংশের বেশি। কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানিও সংকুচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, বিনিয়োগ স্থবিরতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ সুদহার এবং খেলাপি ঋণের চাপ- এই চারটি প্রধান কারণেই ঋণ প্রবৃদ্ধিতে টানা ধস চলছে।বাংলাদেশি স্বাস্থ্য পণ্য

ব্যাংকারদের ভাষ্য, জুন ২০২৫ শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট গভীর হয়েছে এবং বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে আগ্রহ কমেছে। এতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং খাত ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটজনক সময় পার করছে। প্রথমবারের মতো খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের জুন মাসের শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় ২৭ শতাংশ। এই ঋণের পরিমাণ গত মার্চের চেয়ে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি। আর ২০২৪ সালের জুনের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে ১৫১ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি।বাংলাদেশি স্বাস্থ্য পণ্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা হয়েছে মাত্র ১৭৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৫.৪১ শতাংশ কম। একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৮ কোটি ৫১ লাখ ডলারের, যা ২৫.৪২ শতাংশ কমেছে। এর আগের বছরেও (২০২৩-২৪) এই খাতে এলসি খোলা কমেছিল ২৩.৪৬ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৬.২৬ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি কমেছে ৮.৮৫ শতাংশ।


মন্তব্য