হাটলেই তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ

জাপান
  © ফাইল ছবি

প্রযুক্তির দিক থেকে বিশ্বে নজর কেড়েছে জাপান। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রযুক্তির নিখুঁত ও অভিনব সংমিশ্রণ দেখা যায় দেশটিতে। এখানে রেস্তোরাঁয় কলার খোসা ছাড়ানো কিংবা আলু ভাজার মতো একঘেয়ে কাজ করছে রোবট, শহরের বুক চিরে ঘণ্টায় ২০০ মাইল গতিতে ছুটে চলেছে বুলেট ট্রেন। এমনকি টয়লেটে বসেই মিলছে রক্তচাপ ও প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণ মাপার সুবিধা!

প্রযুক্তিনির্ভর দেশ জাপান নতুন এক অভিনব উদ্ভাবনের মাধ্যমে আবারও বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছে। দেশের ব্যস্ত রাস্তা আর জনাকীর্ণ রেলস্টেশনগুলোতে মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপ থেকেই উৎপন্ন হচ্ছে বিদ্যুৎ! এই প্রযুক্তির নাম পায়োজোইলেকট্রিক টাইলস।

পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ জাপান। তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের চেয়ে প্রায় ২৬ গুণ বড়। তবে জনসংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের তিন গুণের একটু বেশি। এই বিপুল জনসংখ্যা জাপানের রাস্তাঘাট, বিশেষ করে টোকিওর শিনজুকু স্টেশনকে করে তুলেছে দারুণ ব্যস্ত। প্রতিদিন এখানে যাতায়াত করেন প্রায় ৩৮ লাখ যাত্রী। জাপান এই ব্যস্ততাকেই রূপ দিয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনায়।

২০০৮ সাল থেকেই শুরু হয়েছে এই উদ্যোগ। পায়োজোইলেকট্রিক টাইলস বা টাইলসের ওপর চাপ পড়লেই তা যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে বিদ্যুতে। উৎপন্ন শক্তি সংরক্ষণ করা যায় পরবর্তী ব্যবহারের জন্য।

তবে এই প্রযুক্তি নতুন হলেও, এর ধারণা বেশ পুরোনো। ১৯ শতকের শেষ ভাগে কিউরি ভাইয়েরা প্রথম লক্ষ করেন—কোয়ার্টজ, টোপাজ, আখসহ কিছু নির্দিষ্ট উপাদানে চাপ প্রয়োগ করলে তাতে ভোল্টেজ তৈরি হয়, যাকে বলা হয় পায়োজোইলেকট্রিক এফেক্ট। এর বিপরীত ঘটনাও ঘটে; বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে এসব উপাদান আকারে পরিবর্তিত হয় বা কম্পন করে।

এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই পায়োজোইলেকট্রিক পদার্থ ব্যবহার হয় ঘড়ি, চুলা জ্বালানোর লাইটার, এমনকি হাঁটার টাইলসেও। চুলা জ্বালানোর লাইটারে চাপ দিলেই যে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়, সেটিও এই প্রযুক্তির ফল।

যদি চাপ প্রয়োগকারী ব্যক্তির ওজন হয় ৬০ কেজি, তাহলে ২০০৮ সালের একেকটি পায়োজোইলেকট্রিক টাইল একবারের চাপে আনুমানিক দশমিক ১ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারত। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এখন একেকটি পদক্ষেপ থেকে উৎপন্ন হতে পারে ৩০ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ। একা একটি পা ফেললে সামান্য শক্তি উৎপন্ন হয়, তবে একসঙ্গে লাখো মানুষের হাঁটার ফলে তা রূপ নিতে পারে বড় শক্তিতে।

কেন এখনো সীমিত এই প্রযুক্তির ব্যবহার : দুটি প্রধান কারণ এই প্রযুক্তিকে মূলধারায় আসতে বাধা দিচ্ছে। প্রথমত, এর উচ্চমূল্য। দক্ষতার ওপর নির্ভর করে একটি টাইলের দাম হতে পারে ৫০ থেকে ১০০ ডলার। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে এসব টাইল বসাতে হলে প্রাথমিক বিনিয়োগ হয়ে যায় বিশাল।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যস্ত জায়গাগুলোতেই এই প্রযুক্তি সবচেয়ে কার্যকর। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, মিসরের ব্যস্ত এলশোহাদা স্টেশনে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে পুরো টাইলের আয়ুষ্কালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ তুলনামূলক কম। অন্য নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস, যেমন সোলার প্যানেল, কম খরচে বেশি বিদ্যুৎ দেয়। পাশাপাশি কম জনবহুল এলাকায় টাইল বসালেও ফল মেলে না।

তদুপরি, ব্যস্ত এলাকায় প্রচুর চাপের কারণে টাইল ভেঙে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি—যা রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়ায়। তবে বেশি আউটপুট দেয় এমন মজবুত টাইল বানানো গেলে এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে হয়ে উঠতে পারে অর্থনৈতিকভাবেও টেকসই।

সূত্র: স্ল্যাশগিয়ার


মন্তব্য