এনবিআরে বরখাস্ত চলছেই

এনবিআর
  © সংগৃহীত

আন্দোলনের জেরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) অস্থিরতা চলছেই। এরই ধারাবাহিকতায় আরও নয়জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সংস্থাটি। মূলত এনবিআর অধ্যাদেশ বাতিলের আন্দোলনের সময় দাপ্তরিক কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের এসব কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

এ নিয়ে আন্দোলনের কারণে গত দেড় মাসে এনবিআরের সদস্য থেকে প্রহরী পর্যন্ত মোট ৩১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ ৯ জনসহ মোট ৪০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

সোমবার (১৮ আগস্ট) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের সই করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এতে বলা হয়েছে, বরখাস্তের পাশাপাশি এসব কর্মকর্তাদেরকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে এনবিআরে সংযুক্ত করা হয়েছে। 

কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের চারজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। চারজন হলেন—সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু; মোংলা কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার আবুল আলা মোহাম্মদ আমীমুল ইহসান খান; চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির যুগ্ম কমিশনার সানোয়ারুল কবির এবং খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।

অপরদিকে, আয়কর বিভাগের পাঁচজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন-আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা; কর অঞ্চল-৭, ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার সুলতানা হাবীব; কর অঞ্চল ফরিদপুরের যুগ্ম কর কমিশনার মো. মেসবাহ উদ্দিন খান; কর অঞ্চল দিনাজপুরের যুগ্ম কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া; সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) পরিচালক ও যুগ্ম কর কমিশনার চাঁদ সুলতানা চৌধুরানী।

বরখাস্তের কারণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১২ মে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারির পর এর বিরোধিতা করে এনবিআর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের কর্মচারীদের কর্মসূচির সময় তারা দায়িত্বরত কর্মচারীদের দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনে বাধা দেন। এর পাশাপাশি, কাজ ত্যাগ করে রাজস্ব ভবনে আসতে বাধ্য করার মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এই কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ধারা-৩৯ (১) অনুযায়ী, এই চার কর্মকর্তাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) নিয়োগ করে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালীন তারা বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।

উল্লেখ্য, গত মে ও জুন মাসে রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করেন। ২৮ ও ২৯ জুন তারা দেশব্যাপী কাজ বন্ধ রেখেছিলেন, যা পরে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় প্রত্যাহার করা হয়। আন্দোলনের পর থেকেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, এবং চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়াও দুদক এনবিআরের ২ সদস্যসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, যাদের অধিকাংশই আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।


মন্তব্য