এনবিআর বিলুপ্তিসহ রাজস্ব প্রশাসনে আসছে পরিবর্তন
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১১:৪৩ AM , আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১১:৪৩ AM
-12148.jpg)
রাজস্ব প্রশাসনে বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে পৃথক ধারায় পরিচালনার লক্ষ্যে গঠন করা হচ্ছে দুটি নতুন বিভাগ— ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ’। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়েছে।
অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়া চূড়ান্ত করতে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্যোগে একাধিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ দফা আলোচনার পর কিছু ধারা সংশোধন করে অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করা হয়। মন্ত্রিসভার উপকমিটি এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।
অধ্যাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো হলো-
• সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে একটি মন্ত্রণালয়কে একাধিক বিভাগে ভাগ করতে পারবেন।
• প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হবে, যা নীতির কার্যকারিতা ও তদারকির দায়িত্বে থাকবে।
• বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (অর্থ: শুল্ক ও আবগারি) বিধিমালা, ১৯৮০ অনুসারে নতুন বিধি ও কাঠামো প্রণয়ন করা হবে।
• সরকারি সম্পদের ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে নিরীক্ষা ও প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক করা হবে। প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দিষ্ট প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
• নতুন কাঠামোয় এই ক্যাডার থেকে দুই সচিব নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশটি অনুমোদনের জন্য তোলা হতে পারে।
সচিবালয় সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—প্রতিষ্ঠা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১২ মে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সরকার জানায়, নতুন সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো রাজস্ব আহরণ থেকে নীতি প্রণয়ন আলাদা করে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থ সংঘাত কমানো এবং রাজস্ব আহরণের আওতা সম্প্রসারণ।
গত ৫০ বছরে এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। বৈশ্বিক গড় অনুপাত ১৬.৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় এটি ১১.৬ শতাংশ। সরকারের মতে, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে এ অনুপাত অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
বিদ্যমান সমস্যার চিত্র
বর্তমান কাঠামোয় কর নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকায়:
• নীতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে স্বার্থ সংঘাত তৈরি হয়।
• কর আদায়কারীরা কাঠামোগত জবাবদিহির বাইরে থাকেন।
• কর ফাঁকিদাতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে প্রায়ই গাফিলতি হয়।
• কর আদায়কারীদের কর্মদক্ষতা যাচাইয়ের কোনো বস্তুনিষ্ঠ সূচক নেই।
ব্যবসায়ী মহল অভিযোগ করে আসছে যে, ‘বাংলাদেশে করজালের আওতা এখনো সীমিত। রাজস্ব নীতি নির্ধারণে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ থাকলে তা বৈজ্ঞানিক ও তথ্যভিত্তিক হবে। এটি মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণে বড় ভূমিকা রাখবে। নীতি ও বাস্তবায়ন একসঙ্গে থাকলে প্রায়ই স্বার্থসংঘাত হয়। বিভাগ আলাদা হলে জবাবদিহি ও দক্ষতা দুটোই বাড়বে। তবে এজন্য জনবল উন্নয়ন জরুরি।’
সরকারি সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন নীতি কার্যকর হলে— সরকারি সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারে দক্ষতা বাড়বে, অনিয়ম ও অপচয় অনেকটাই কমে আসবে এবং আর্থিক সাশ্রয় হবে এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।