শেয়ারবাজারের প্রভাবে ব্যাংকের বড় ক্ষতি
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৫, ০১:২৩ PM , আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৫, ০১:২৩ PM
দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা বিরাজ করছে শেয়ারবাজারে। আর শেয়ারবাজারের মন্দা ও ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের কারণে ২০২৪ সালে দেশের ৩১টি ব্যাংক সম্মিলিতভাবে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার অবাস্তবায়িত লোকসানের (unrealised loss) মুখে পড়েছে। যদিও ব্যাংকগুলো শেয়ার বিক্রি করেনি, তবে বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় কাগজে-কলমে এই ক্ষতির হিসাব তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর লোকসান সবচেয়ে বেশি হলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলিও ক্ষতি এড়াতে পারেনি। তবে বিদেশি ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে না ঢোকায় তারা লোকসানের বাইরে ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর এই লোকসানের মূল কারণ দুর্বল পারফর্ম করা বা ‘জাঙ্ক স্টক’-এ বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ। উদাহরণ হিসেবে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ডের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হলে এই বন্ডের মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। এছাড়া, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং পিপলস লিজিংয়ের মতো সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেও বেশ কিছু ব্যাংক ক্ষতির মুখে পড়ে।
লোকসানের কারণে বেশিরভাগ ব্যাংককে প্রভিশন গঠন করতে হয়েছে। তবে তিনটি ব্যাংক—মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক—তাদের শেয়ারবাজার বিনিয়োগ থেকে লাভ করেছে।
সবচেয়ে বড় লোকসান করেছে জনতা ব্যাংক, প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ ব্যাংকের ক্ষতির পেছনে রয়েছে বেক্সিমকো সুকুক বন্ড, বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, সামিট পাওয়ার ও বেস্ট হোল্ডিংসে বিনিয়োগ। পাশাপাশি প্রায় ৫০ কোটি টাকার জাঙ্ক শেয়ারও ব্যাংকের পোর্টফোলিওতে রয়েছে।
জনতা ব্যাংকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লোকসান করেছে সোনালী ব্যাংক—৩৯৮ কোটি টাকা। ইস্টার্ন ব্যাংক ক্ষতি করেছে ৩৫৩ কোটি এবং সাউথইস্ট ব্যাংক ৩২৬ কোটি টাকা। এবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকও প্রত্যেকে ২০০ কোটির বেশি লোকসানে পড়েছে। আর উত্তরা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১০০ থেকে ২০০ কোটির মধ্যে ক্ষতি স্বীকার করেছে।
বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। আমানতের বিপরীতে অনিশ্চিত রিটার্নের ঝুঁকি নিয়ে শেয়ারে বিনিয়োগ করাটা সঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, “জাঙ্ক স্টকে বিনিয়োগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য প্রশিক্ষিত ও পেশাদার জনবল প্রয়োজন।”
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকগুলোর লোকসান তাদের দুর্বল পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার ঘাটতিকে স্পষ্ট করেছে। কারণ তারা মূলত ঋণ ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের শেয়ারবাজার বিনিয়োগে নিয়োগ দিচ্ছে। অথচ শেয়ারবাজার সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি ক্ষেত্র, যেখানে বিশেষজ্ঞতা অপরিহার্য।
২০২৪ সালে ডিএসইএক্স সূচক ১৬ শতাংশ কমলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটিই লোকসানের একমাত্র কারণ নয়। দক্ষ পোর্টফোলিও ম্যানেজাররা মন্দা বাজারেও ইতিবাচক রিটার্ন আনতে পারেন। তারা মনে করেন, পেশাদার ব্যবস্থাপনার অভাবে ব্যাংকগুলো ভবিষ্যতেও আরও বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে।