এনবিআরে বদলি-পদায়নে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০০ PM , আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪২ PM

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদায়ন প্রায় নির্ভর করে কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ইচ্ছা ও বলয়ের ওপর। সিপাহি থেকে শুরু করে কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, উপকমিশনার ও সহকারী কমিশনার পর্যন্ত কে কোন ডিভিশনে বা কাস্টম হাউসের কোন ইউনিটে দায়িত্ব পাবেন, তা মূলত সংশ্লিষ্ট কমিশনার ও বলয়ের নির্দেশনায় নির্ধারিত হয়। অভ্যন্তরীণ অর্ডার বা পদায়নের দায়িত্ব থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োগ বা অপছন্দের কর্মকর্তাকে নন-ফাংশনাল দপ্তরে বদলির জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, কখনও কর্মকর্তাদের ঢাকায় উপস্থিত হতে বাধা দেওয়ার মতো নির্দেশও দেওয়া হয় এবং এনবিআরের আন্দোলনকে ব্যবহার করে অপছন্দের কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত বা শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।
সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের নতুন প্রশাসনে ১৫ ব্যাচের মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সদস্য হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি ওএসডি মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরীর বন্ধু হিসেবে শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে প্রথম সচিব আমীমুল ইহসানকে সরিয়ে নিজের ঘনিষ্ঠ ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামকে নিয়োগ দেন। এরপর শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কম্পিউটার অপারেটরদের বদলি শুরু হয়। বিশেষভাবে আন্দোলনে যুক্ত কর্মকর্তাদের গণবদলি করা হলেও নিজের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেন তার ২৯ ব্যাচের যুগ্ম কমিশনার মারুফুর রহমানকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে পদায়ন করেন। আন্দোলনে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস শাটডাউনের কারণে কমিশনার সাময়িক বরখাস্ত হলেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন।
এনবিআরের বদলি ও পদায়ন নীতি ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত, বন্ড কমিশনারেট, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ বিভিন্ন বিভাগে বলয়ের বাইরে থাকা কর্মকর্তারা শাস্তিমূলক বদলির শিকার হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, শুল্ক গোয়েন্দায় মোয়াজ্জেম হোসেনের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা রেজওয়ান আলমগীরকে ঢাকা এয়ারফ্রেইটের দায়িত্ব দেওয়া হয়, আর সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাইকেও গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে স্থাপন করা হয়।
এনবিআরের পদায়ন নীতিমালা অনুযায়ী ‘ক’ থেকে ‘ঘ’ ক্যাটাগরিতে অফিসগুলো বিভক্ত। ‘ক’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি, কাস্টম মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা, কাস্টম রেয়াত ও প্রত্যর্পণ, কাস্টম রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেট। ‘খ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্ট সেল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট উত্তর/দক্ষিণ, কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট পূর্ব/উত্তর। ‘গ’ ও ‘ঘ’ ক্যাটাগরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট অন্তর্ভুক্ত। মূল নীতি অনুযায়ী ‘ক’ থেকে ‘খ’ ক্যাটাগরিতে বদলি করা যায়, কিন্তু ‘খ’ থেকে ‘গ’ বা একই ক্যাটাগরিতে রাখা সাধারণত শাস্তিমূলক পদায়ন হিসেবে ধরা হয়।
এনবিআরের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসনের পদায়ন মূলত কর্মকর্তা এবং কমিশনারদের কাজের আগ্রহ ও রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। তবে বর্তমান প্রশাসন এই নীতিমালা মেনে চলছে না, যার ফলে ব্যক্তিগত প্রভাব ও বলয়ের ভিত্তিতে পদায়ন ও বদলি প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতার অভিযোগ উঠে।
সূত্র: কালবেলা