উমামার এনসিপি ত্যাগের নেপথ্যে ডাকসু ভিপি পদ!

উমামা
  © সংগৃহীত

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানো সংগঠনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার একদিন পরেই ফেসবুকে দেওয়া তার একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে এ আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র বলছে, মূলত ডাকসু ভিপির পদে আসীন হতেই ঠুনকো অজুহাতে সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্রের পদ থেকে সরে এসেছে। 

সূত্র জানায়, উমামা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই বাম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই তার মধ্যে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস কাজ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সে রাজনৈতিক সংগঠনের ভেতরে-বাইরে থেকে কৌশলে শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। ১ম বর্ষেই চালাক উমামা ‘বৈধ সিট আমার অধিকার’ নামক একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলে এর নেতৃত্ব দেন। এ সময়ে নিজের পাশাপাশি অন্য শিক্ষার্থীদেরও বাম আর্দশে অনুপ্রাণিত করতে কাজ করেন। তাদেকে বড় ধরনের বিপ্লবের স্বপ্ন দেখান। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে একটি সুসংগঠিত ও লেজটিমেট বডির নামে ছাত্র সংসদের কথা প্রচার করতে থাকেন। এর পেছনে মূলত একটি বাম ছাত্র সংগঠনের প্রত্যক্ষ এ পরোক্ষ ইন্ধন কাজ করেছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উমামার ঘনিষ্ঠ এক মেয়ে সহপাঠি বাংলাকন্ঠকে বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সে (উমামা) হুট করে সরে আসেনি। এটি তার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা অনুযায়ীই করেছে। কারণ, ছাত্রদের এমন একটি নির্দলীয় ও বৃহৎ ফ্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত না হলে তাকে কেউ চিনতো না। সে (উমামা) সে সুযোগটারই অপেক্ষা ছিল। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরিচিতি পাওয়ার পর সে তার ছক অনুযায়ী সময় মত কাজে লাগিয়েছে। ঠুনকো একটি অজুহাত দেখিয়ে সে সরে এসেছে। অথচ এখন সে ঠিকই ডাকসুতে নির্বাচনের খায়েশ প্রকাশ করেছে।"
 
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্যানেল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার, সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করতে চাইলে তার প্যানেলে যোগদানে আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার (৩০ জুলাই) নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন। উমামার এ ঘোষণার মধ্য দিয়েই তার ডাকসু ভিপি পদে আসীন হওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছে। 

ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে উমামা বলেন, সম্মানিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ, সবাইকে শুভেচ্ছা। আপনারা ইতিমধ্যে জানেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-২০২৫ এর তফসিল ঘোষণা হয়েছে এবং নির্বাচন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

আমি উমামা ফাতেমা, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম এবং রাজনৈতিক সংগঠনের ভেতরে-বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করে আসছি। ১ম বর্ষে থাকাকালীন বৈধ সিটের দাবিতে ‘বৈধ সিট আমার অধিকার’ নামক প্ল্যাটফর্মটি গড়ে তুলি, পাশাপাশি আমার এই স্বল্প পথচলার অভিজ্ঞতায় আমি অনুধাবন করেছি যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের বিপ্লব ব্যতীত এখানকার সমস্যাগুলো সমাধান করা খুবই কঠিন, আর সে পরিবর্তন আনতে পারে কেবল শিক্ষার্থীরাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে সংগঠিত ও লেজটিমেট একটি বডি, যেটি কেবল ছাত্র সংসদ।

আমি বিশ্বাস করি, এই ছাত্র সংসদে শিক্ষার্থীরা এমন নেতৃত্ব চায়, যারা কোনো পক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেনা, শিক্ষার্থীদের অধিকারের ব্যাপারে অটল থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধুমাত্র নেতা বানানোর কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে না। শিক্ষার গুণগত মান ও গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

সেই জায়গা থেকে, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে থাকা বা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবনাচিন্তা রয়েছে ঐ সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল করতে চাই যা আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে গবেষণাভিত্তিক ও দূরদর্শী কাজ করার চেষ্টা করবে।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা যারা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করা উচিত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে ও রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের ফলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে চান। 

যে সব শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে চান তাদের আমি আমাদের প্যানেলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি কমেন্টে প্রদত্ত ফর্মটি পূরণ করার জন্য।

সংশ্লিষ্ট একাধিক লোক জানান, ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল দিয়ে উমামা মূলত ভিপি পদের জন্য লড়তে চান। এর আগে (২৮ জানুয়ারী) সে মূলত শিক্ষার্থীদের সিম্পেথি (আনুকূল্য) আদায় করতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে পদত্যাগ করে। এখন সেই সিম্পেথির ওপর ভর করেই ডাকসুতে ভিপি পদে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বলে অনেকে মন্তব্য করেন। তখন ফেসবুক পোস্টে উমামা বলেন “যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, আমার সাথে নোংরামি করেছে এতগুলা মাস, অভ্যুত্থানকে বাজারদরে কেনাবেচা করেছে তাদের আমি কখনো ক্ষমা করব না।”

অভ্যুত্থানের পর ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়া উমামা বলেন, “রাজনৈতিকভাবে ভাবলে পদত্যাগ করে আসাটা সবথেকে সহজ। কিন্তু আমি তো মানুষ, অনেক কঠিন, অভ্যুত্থানের কারণে পারি নাই। আমি এই প্ল্যাটফর্মে তো দেশ সংস্কার করতে আসছিলাম। কাঁদা ছোড়াছুড়ি করতে তো আসি নাই এখানে।”


মন্তব্য