মুখোশ খুলে দিলেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী
- বিনোদন ডেস্ক:
- প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৩:০৩ PM , আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৩:০৩ PM

পাকিস্তানের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী আলিজে শাহ। শুধু পাকিস্তান নয়, ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার ভক্ত-অনুরাগী। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী বিনোদন জগতের অভ্যন্তরীণ নির্যাতন, হেনস্তা, মিডিয়ায় অপমান এবং শিল্পীদের প্রতি শোষণমূলক আচরণ নিয়ে মুখ খুলেছেন। গত সোমবার (২২ জুলাই) রাতে নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে একের পর এক অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।
২৫ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী জানান, এসব ঘটনার কারণে তাকে ট্রোল, উপহাস এমনকি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আলিজে লেখেন, ‘আমি এখন প্রতিটি সেই ব্যক্তির মুখোশ খুলে দেব, যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছেন। আমাকে নিয়ে ট্রোল করা, মিম বানানো—এসব বন্ধ হোক। অভিনেত্রীদের জীবন কতটা কঠিন আপনাদের ধারণা নেই। ’
২০২১ সালের ‘ব্রাইডাল কিটিওয়ার উইক’-এ সংগীতশিল্পী শাজিয়া মানজুরের সঙ্গে র্যাম্পে হাঁটার সময় আলিজের হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। শুরুতে একে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বললেও এবার আলিজে দাবি করেন, এই ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা ডান দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এই নারী (শাজিয়া মানজুর) আমাকে টেনে মেঝেতে ফেলে দেন। পুরো শো'জুড়ে তিনি আমার কোমরে হাত রেখেছিলেন এবং আমাকে বারবার ফেলার চেষ্টা করছিলেন।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘পরবর্তীতে তিনি টিকটক তারকা জান্নাত মির্জা এবং উপস্থাপিকা জুগন কাজিমের সঙ্গে মিলে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন। এমনকি অন্য অনুষ্ঠানেও গিয়ে অন্য তারকাদের নিয়ে হাঁটতেন, যেন আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতে পারেন।’
শুধু ব্যক্তিগত অপমান নয়, আলিজে পাকিস্তানের বিনোদন জগতের পেমেন্ট প্রক্রিয়াকেও তুলোধুনো করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পারিশ্রমিকের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। আমরা আমাদের নিজের টাকাই চেয়ে চেয়ে ক্লান্ত হয়ে যাই। তিন মাস পর একটা চেক হাতে দিলে মনে হয় যেন তারা আমাদের দয়া করে কিছু দিচ্ছে। এই কারণেই আমি কাজ ছেড়ে দিই।’
তিনি দাবি করেন, এই অবস্থার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেই তাকে ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ করা হয় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় টাকা দিয়ে তাকে নিয়ে ট্রোল ছড়ানো হয়।
অভিনেত্রী বলেন, ‘ডিরেক্টররা মিটিংয়ে আমাকে ডাকে, কিন্তু কাজ না দিয়ে বলে, ‘তোমার ইমেজ খুব খারাপ, আমরা তোমাকে নিতে পারি না।’ যদি কাজ না দিতে চাও, তাহলে মিটিং ডেকে এই অপমান কেন? আমি কারো সম্পত্তি না, আমার ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার তোমাদের নেই।’
এক বছর আগে আলিজের বিরুদ্ধে সহ-অভিনেত্রীর ওপর সিগারেট ছুঁড়ে মারার অভিযোগ ওঠে। আলিজে তা অস্বীকার করে বলেন, ‘সে আমাকে ধাক্কা দেয়, আমি পড়িনি। এরপর সে আমাকে চড় মারে। আমি হতবাক হয়ে যাই। পরে সে সবাইকে বলে আমি নাকি তার দিকে সিগারেট ছুঁড়ে মারি।’
আলিজে আরও জানান, ঘটনাটি শুটিংয়ের সময় ক্যামেরায় রেকর্ড হলেও সিগারেট ছোড়ার কোনো দৃশ্য সেখানে নেই।
তিনি স্বীকার করেন, পরে তিনি ঐ অভিনেত্রীর রুমে গিয়ে তাকে লক্ষ্য করে নিজের স্যান্ডেল ছুঁড়ে মারেন।
‘হ্যাঁ, আমি স্যান্ডেল ছুঁড়েছি। কিন্তু আমি তোমাকে স্পর্শও করিনি। তুমি কী ভয়ংকর একজন মানুষ!’ — তিনি বলেন।
তবে পুরো বিষয় নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করতে তাকে বারণ করা হয়েছিল, যাতে নাটকের কাজ বন্ধ না হয়ে যায়।
সহকর্মীদের দ্বারা শারীরিক স্পর্শ নিয়ে মুখ খুলেন তিনি। আলিজে জানান, ‘যদি কোনো দৃশ্যে না থাকে, তাহলে আমাকে ছোঁয়ার কারো অনুমতি নেই। আমাকে আগে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমি কারো সম্পত্তি নই।’
তার এই কঠোর ব্যক্তিগত সীমারেখা রাখার মানসিকতাই তাকে অনেক প্রযোজকের টার্গেটে পরিণত করেছে বলে তার বিশ্বাস।
আলিজে শাহ তার সিরিজ পোস্টের শেষাংশে বলেন, ‘যারা আমাদের নিয়ে ট্রোল করে, ব্যঙ্গ করে—তাদের বোঝা উচিত একজন নারী শিল্পীর জন্য পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কাজ করা কতটা কঠিন। আমাদের প্রতি সম্মান দেখান।’
আলিজের এমন খোলামেলা বক্তব্যে পাকিস্তানের বিনোদন দুনিয়ায় নারী অভিনেত্রীরা কীভাবে নানা মাত্রায় নির্যাতনের শিকার হন, তার একটি জোরালো চিত্র উঠে এসেছে। এখন দেখার বিষয়, এই সাহসী স্বীকারোক্তি নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।