ট্রাম্পের হুমকি
ইসরাইল-মার্কিন ‘অটুট বন্ধুত্বে' হঠাৎ ফাটল!
- আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৮:৪৫ PM , আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫, ০৮:৪৫ PM

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ বিরতির মাঝেই হঠাৎ ভিন্ন এক চেহারা নিয়ে হাজির হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরাইলকে বিস্ময়করভাবে এক হুমকি দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলাগুলোর বিচার বাতিল করতে হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে ইসরাইলকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮০ কোটি ডলারের বার্ষিক সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হবে। ইহুদি সংবাদ মাধ্যম হারেৎস অনলাইনে লিখেছে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন। একজন প্রেসিডেন্ট এমনভাবে কোনো মিত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করলেন। তাও আবার এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে যা দীর্ঘদিন ধরে ‘অটুট বন্ধুত্ব’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া পোস্টে লিখিছেন, ইসরাইলে নেতানিয়াহুর সঙ্গে যা হচ্ছে তা ভয়াবহ। তিনি একজন যুদ্ধ-বীর এবং এমন একজন প্রধানমন্ত্রী যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করে ইরানের বিপজ্জনক পারমাণবিক হুমকি মোকাবিলায় অসাধারণ সাফল্য এনেছেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি এই মুহূর্তে হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন, যাতে জিম্মিদের মুক্ত করার বিষয়টিও আছে। ট্রাম্প আরও লিখেছেন, কীভাবে সম্ভব যে একজন প্রধানমন্ত্রীকে সারাদিন কোর্টরুমে বসিয়ে রাখা হয়- সিগার, কার্টুন পুতুল (বাগস বানি) ইত্যাদি নিয়ে? এটা কিছুই না! এটা একটা রাজনৈতিক জাদুবিদ্যার বিচার (উইচহান্ট), একেবারে আমার সঙ্গে যা হয়েছিল, ঠিক তেমনই। ট্রাম্প দাবি করেন, এই ‘বিচারের নাটক’ ইরান ও হামাসের সঙ্গে চুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ইসরাইলকে রক্ষা ও সহায়তা করতে। আমরা এই ধরনের বিচার মেনে নিতে পারি না। শেষে তিনি লিখেছেন, আমরা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে একটি মহান বিজয় অর্জন করেছি এবং এই বিচার সেই বিজয়কে কলঙ্কিত করছে। ‘বিবিকে মুক্তি দাও’ (উল্লেখ্য নেতানিয়াহুকে ইসরাইলিরা বিবি হিসেবে আখ্যায়িত করেন), কারণ তার হাতে একটি বিশাল দায়িত্ব!
এর আগে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের লনে এবং এক টেলিফোন আলাপে নেতানিয়াহুকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, ইরানের সঙ্গে তার (ট্রাম্পের) মধ্যস্থতায় অর্জিত যুদ্ধবিরতি বিপন্ন করছেন নেতানিয়াহু। তবে এরপর থেকে তিনি নেতানিয়াহুর প্রশংসাই করে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরাইলের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী, যিনি দুর্নীতির অভিযোগে বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে তিনটি ভিন্ন মামলায় ঘুষ গ্রহণ, প্রতারণা এবং আস্থার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সব মামলাই মূলত মিডিয়া মালিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের বিনিময়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার সংক্রান্ত।
ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা অতীতে ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে ইসরাইল ইস্যুতে রাজনৈতিক প্রচারণা চালিয়েছেন। দাবি করেছেন বারাক ওবামা, জো বাইডেন কিংবা কমালা হ্যারিস ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন ফিলিস্তিনি সংকটের কারণে। তবে এবার ট্রাম্প নিজেই ইসরাইলকে দেয়া মার্কিন সহায়তা নিয়ে হুমকি দিলেন, তাও মানবিক সংকট নয়, বরং নেতানিয়াহুর বিচার প্রক্রিয়াকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যায়িত করে।
এই অবস্থান একদিকে যেমন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ঐতিহ্যকে ভাঙছে, অন্যদিকে ইসরাইলি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আমেরিকার সরাসরি হস্তক্ষেপের দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এ ধরনের হুমকি ইসরাইলের বিচার বিভাগ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।