বিশ্বযুদ্ধের সতর্কবার্তা দিলেন ন্যাটো প্রধান

ন্যাটো
  © ফাইল ছবি

রাশিয়া ও চীনের ‘ঘনিষ্ঠ মিত্রতা’ বিশ্বকে দ্রুত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই সতর্কবার্তা দেন।

নিউইয়র্ক টাইমসকে মার্ক রুটে বলেন, “বর্তমানে ইউক্রেনে যা ঘটছে, অদূর ভবিষ্যতে খুব সম্ভবত তাইওয়ানেও এমন ঘটবে। চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে নিবিড় বন্ধুত্ব আছে এবং পশ্চিম যদি এই ব্যাপারটি বুঝতে ব্যর্থ হয়, তাহলে অচিরেই আমরা সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবো, অর্থাৎ একটা বৈশ্বিক যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে এবং গত শতকের দুই বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় সম্ভাব্য সেই যুদ্ধে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির হার হবে অনেক বেশি।”

চলতি বছর ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো। এ বিষয়ক প্রস্তুতির মধ্যেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা ব্যক্ত করলেন রুটে।

ন্যাটো মহাসচিবের এই আশঙ্কাকে ভিত্তিহীন বলার উপায় নেই। কারণ সম্প্রতি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান কাজা কালাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে কাজা কালাসকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে চীন কখনও রাশিয়াকে পরাজিত হতে দেবে না।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, যদি ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া পরাজিত হয়— তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের মনযোগের কেন্দ্রে হয়ে উঠবে চীন এবং এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চল। এর জেরে যে অভূতপূর্ব বৈরিতা দেখা দেবে— তা বিশ্বের জন্য বিপর্যয়কর হয়ে উঠতে পারে।

মার্ক রুটে গত বছর ন্যাটোর মহাসচিব পদে এসেছেন। এর আগে ১৪ বছর নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। নিউইয়র্ক টাইমসকে রুটে বলেন, তৃতীয় যুদ্ধের আঁচ পেয়ে ইতোমধ্যে নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপের অনেক দেশ।

তবে তারপরও বিশ্বকে বিপর্যয়ের হাত থেকে ঠেকাতে ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন মার্ক রুটে এবং ‘কিছু বিতর্ক’ ও ‘মূল্যবোধগত পার্থক্য’ থাকলেও ন্যাটো এখনও সংঘবদ্ধ বলেও দাবি করেছেন তিনি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে হাঙ্গেরি এবং তুরস্কের অবস্থান ন্যাটোর অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র থেকে ভিন্ন। এ দু’টি রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বা শান্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আমাদের মধ্যে বির্তক আছে, মূল্যবোধগত পার্থক্য আছে, কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে যে এই পার্থক্যগুলোর জন্যই এই জোট এখনও এত সজীব এবং শক্তিশালী।”

“আর একটি কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। যদি বিপর্যয় আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটোর সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হতে সময় নেবে আমার মনে হয় না।”


মন্তব্য