ফিলিস্তিন ইস্যুতে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত
- আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৭ PM , আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৪ PM

স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিন ইস্যুতে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোন স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি তাঁর স্বীকৃতি জানিয়েছেন। তার এই সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী বলে মনে করছেন অনেক বিশ্বনেতা। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে দখলদার ইসরাইলের প্রতিও আহবান জানিয়েছন। তার এমন ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের মধ্যে সাড়া পড়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন ম্যাক্রন। অনেকেই বলছেন, পশ্চিমা নেতৃত্বে বিরল এক সাহসিকতা দেখিয়েছেন তিনি।
ফ্রান্সের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে এক্সে দেয়া এক পোস্টে ম্যাক্রন এই ঘোষণা দেন।
ম্যাক্রন এক্স পোস্টে লিখেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো গাজায় যুদ্ধের অবসান ও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা।’ তিনি আরও লিখেন, ‘শান্তি সম্ভব। আমাদের এখনই একটি যুদ্ধবিরতি দরকার, সব বন্দীর মুক্তি এবং গাজার জনগণের জন্য বিপুল মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ম্যাক্রন লিখেন, ‘একই সঙ্গে হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে, গাজাকে সুরক্ষিত করতে হবে ও পুনর্নির্মাণ করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তা পুনর্গঠন করতে হবে। আমাদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে, তার টিকে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’
ম্যাক্রন বলেন, এসব করতে হলে ফিলিস্তিনকে নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হতে হবে ও ইসরাইলকে সম্পূর্ণ স্বীকৃতি দিতে হবে। আর এই পদক্ষেপই এই অঞ্চলের সবার নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
ম্যাক্রন এক্স পোস্টে আরও বলেন, ফ্রান্সের নাগরিকেরা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চায়। ফরাসি, ইসরাইলি, ফিলিস্তিনি, ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদার— সবার দায়িত্ব এটা প্রমাণ করা যে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
ম্যাক্রন ঘোষণা দেন যে, ফ্রান্স জাতিসংঘের আগামী সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। তার এই ঘোষণাকে “ঐতিহাসিক মুহূর্ত” বলে আখ্যা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
“ফ্রান্স দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, টেকসই শান্তির জন্য দুই-রাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র পথ। আগামী সেপ্টেম্বরে আমরা জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেব,” —এমানুয়েল ম্যাক্রন, [@EmmanuelMacron, X, ২০ জুলাই ২০২৫]
এই ঘোষণার পরই ফিলিস্তিন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্ক, জর্ডান, লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাধারণ মানুষ ও মুসলিম নেতারা। ইউরোপের মুসলমানরাও সামাজিক মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
“এটা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ইউরোপের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার এই অবস্থান ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।”
সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ্বাস:
এক্স, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম—সবখানেই ম্যাক্রনের ছবি ও বক্তব্য শেয়ার হচ্ছে বিপুল উৎসাহে। “মুসলমানদের বন্ধু”, “নবনির্বাচিত মুসলিম মন” ইত্যাদি ট্যাগলাইনে তাকে অভিহিত করছেন অনেকে।
ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ:
ফ্রান্সের এই ঘোষণার মাধ্যমে ইউরোপের ঐক্যতানে একটি বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তবে প্যালেস্টাইনি কর্তৃপক্ষ প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। প্যালেস্টাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে:“ফ্রান্সের এই সাহসী পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের পক্ষে এক শক্তিশালী বার্তা।”
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া:
বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো বিবৃতি না দিলেও জানা গেছে, ঢাকা ফ্রান্সের এই অবস্থানকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন সমীকরণের সূচনা হতে চলেছে—যেখানে পশ্চিমা বিশ্বে একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা মুসলিম বিশ্বের দীর্ঘদিনের একটি দাবি মেনে নেয়ার পথে এগোচ্ছেন। এই ঘোষণার বাস্তবায়ন কতটা দ্রুত ও কার্যকর হবে, তা এখন দেখার বিষয়। তবে এতটুকু নিশ্চিত—ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র স্বীকৃতির পথে এমানুয়েল ম্যাক্রন একটি সাহসী পদক্ষেপ রেখেছেন, যা ইতিমধ্যে বিশ্বমুসলিমদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।