ট্রাম্পের ঘোষণায় গাজায় নতুন শঙ্কা

গাজা
  © রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব করেছেন যে গাজায় খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলো ইসরায়েল পরিচালনা করবে। তবে সমালোচকদের মতে, এ পদক্ষেপ ইসরায়েলি দখল আরও সুসংহত করবে এবং খাদ্যসাহায্য নিতে আসা মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলবে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) প্রেসিডেন্টের বিশেষ বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প ইসরায়েলের সেই বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করেন যে হামাস গাজায় বিতরণ করা খাদ্যসাহায্য লুট করে নেয়। তবে সহায়তাদানকারী সংস্থা ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছেন।

এমনকি ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হামাসের কাছে খাদ্য যাওয়ার প্রমাণ নেই। তবুও ট্রাম্প ভিন্ন দাবি করেছেন।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “অনেক কিছুই চুরি হয়ে গেছে। তারা অর্থ পাঠায়, খাদ্য পাঠায়, আর হামাস তা চুরি করে নেয়। এটি এক ধরনের জটিল খেলা।”

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
গাজায় খাদ্য সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েল। তবুও দেশটির ওপর ভরসা করছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, তিনি ইসরায়েলকে বিশ্বাস করেন যে তারা মার্কিন সহায়তা সঠিকভাবে বিতরণ করতে পারবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করব। এবং আমরা মনে করি তারা ভালোভাবে এটি করতে পারবে। তারা খাদ্যকেন্দ্রগুলোর তত্ত্বাবধান করতে চায় যেন বিতরণ ঠিকমতো হয়।”

তবে এসব কেন্দ্র কোথায় ও কখন স্থাপন করা হবে এবং ইসরায়েল সরাসরি এগুলো চালাবে নাকি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত সহায়তা সংস্থা জিএইচএফ (GHF)-এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে, তা স্পষ্ট নয়।

সহায়তা বিতরণ নিয়ে উদ্বেগ
ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় জাতিসংঘ ও এর সহযোগীদের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ পুনরায় শুরু করতে এখনো প্রস্তুত নয়।

মে মাস থেকে ইসরায়েল গাজায় অবরোধ আরও কড়া করেছে এবং খাদ্যপ্রবেশ প্রায় একচেটিয়াভাবে জিএইচএফ-এর মাধ্যমে হচ্ছে, যাদের দক্ষিণ গাজায় চারটি কেন্দ্র রয়েছে।

এই অবরোধের ফলে গাজায় ইসরায়েলি আরোপিত ক্ষুধা সংকট দেখা দিয়েছে এবং অপুষ্টিতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনা ও জিএইচএফ থেকে আসা হুইসেলব্লোয়াররা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এসব কেন্দ্রে ঘটতে থাকা নির্যাতনের বিবরণ দিয়েছেন।

মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য অ্যান্থনি আগুইলার যিনি জিএইচএফ-এর সঙ্গে কাজ করেছেন, জানিয়েছেন, এই সংস্থা গাজায় যথাযথভাবে খাদ্য সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জিএইচএফ গাজাবাসীদের দক্ষিণ দিকে ঠেলে দেওয়ার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুতি বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

আগুইলার মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হলেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি বহুবার দেখেছি ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ভিড়ের দিকে গুলি চালাচ্ছে। তাদরে মাথায়, তাদের পায়ে। শুধু রাইফেল বা মেশিনগান নয়, বরং ট্যাংক, গোলা, আর্টিলারি, মর্টার ও মিসাইল ব্যবহার করছে।”

সহায়তা গ্রহণকারীরা ইসরায়েলি টার্গেটের শিকার বলে জোর দিয়ে তিনি বলেন, “ভিড় নিয়ন্ত্রণের নামে তারা (ইসরায়েল) এগুলো করছে। কারণ তারা যোদ্ধা ছিল না, শত্রুভাবাপন্ন ছিল না কিংবা হামাসের সদস্যও ছিল না।”

ট্রাম্পের স্বীকারোক্তি
সমালোচকরা বলছেন, খাদ্য বিতরণে ইসরায়েলি সেনাদের দায়িত্ব দিলে সহায়তা নিতে আসা মানুষের ওপর আরও নির্যাতনের ঝুঁকি বাড়বে।

ইসরায়েল বরাবরই দাবি করে আসছে, গাজায় প্রকৃতপক্ষে কোনো ক্ষুধা নেই এবং এ বিষয়ে প্রমাণিত তথ্যকে ‘হামাসের প্রচারণা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

তবে সোমবার ট্রাম্প স্বীকার করেন যে গাজায় “বাস্তব ক্ষুধা” আছে। যদিও তিনি ইসরায়েলকে কোনোভাবে সমালোচনা করেননি।

বরং মঙ্গলবার তিনি জোর দিয়ে বলেন যে ইসরায়েলই খাদ্য বিতরণের দায়িত্ব পালন করবে।

ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি ইসরায়েল এটা করতে চায় এবং তারা ভালোভাবেই এটি করতে পারবে। খাদ্য সঠিকভাবে বিতরণ হবে।”

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করা মানেই “হামাসকে পুরস্কৃত করা”।

“আপনি যদি সেটা করেন, তাহলে আপনি আসলে হামাসকেই পুরস্কৃত করছেন। আমি সেটা করতে যাচ্ছি না,” বলেন ট্রাম্প।

গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। অভিযোগের মধ্যে ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের কথাও উল্লেখ ছিল।

জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মঙ্গলবার জানিয়েছেন যে গাজায় এখন “ক্ষুধাজনিত দুর্যোগের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে”।


মন্তব্য