রাশিয়া সঙ্গে পাকিস্তানের লেনদেন নিয়ে ভারতে তোলপাড়
- আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০৪ PM , আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০৪ PM

ভারতের চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের হাতে চীন-নির্মিত জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানে ব্যবহারের জন্য রাশিয়ার তৈরি আরডি-৯৩ ইঞ্জিন বিক্রির সাম্প্রতিক খবর ভারতের রাজনীতিতে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দলগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেও, মস্কোর শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তি দীর্ঘমেয়াদে ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে ‘সুবিধাজনক’ করবে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোর প্রিমাকভ ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগ প্রধান পিওতর তোপিচকানভ এই সমালোচনাকে ‘অযৌক্তিক’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, আরডি-৯৩ ইঞ্জিন সরবরাহ হলে ভারত মূলত দুটি কারণে লাভবান হবে—
১. চীনের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: এই চুক্তি প্রমাণ করছে যে চীন ও পাকিস্তান এখনও রাশিয়ার তৈরি এই ইঞ্জিনের কার্যকর দেশীয় বিকল্প তৈরি করতে পারেনি। ফলে তাদের প্রতিরক্ষা শিল্প রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে।
২. যুদ্ধবিমানের পরিচিতি: তোপিচকানভ বলেন, যেহেতু জেএফ-১৭ একই রাশিয়ান ইঞ্জিন ব্যবহার করছে, তাই ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কাছে এই বিমান ‘পরিচিত এবং অনুমানযোগ্য’ থাকবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ভারত ২০২৫ সালের মে মাসে সংঘটিত সংকট (অপারেশন সিঁদুর) সময় জেএফ-১৭-এর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল।
এ ছাড়া, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন রুশ বিশেষজ্ঞ জানান, মস্কো অতীতে নয়াদিল্লিকে আশ্বস্ত করেছিল যে আরডি-৯৩ চুক্তিটি সম্পূর্ণরূপে বাণিজ্যিক এবং এতে কোনো প্রযুক্তি হস্তান্তর অন্তর্ভুক্ত নেই। এর বিপরীতে, ভারতকে অনেক বেশি উন্নত আরডি-৩৩ ইঞ্জিনের লাইসেন্সসহ প্রযুক্তির হস্তান্তর অনুমোদন করা হয়েছে।
ইঞ্জিন প্রযুক্তির পার্থক্য ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ক্লিমভ প্ল্যান্টে তৈরি করা আরডি-৯৩ ইঞ্জিনটি, এর মূল সংস্করণ আরডি-৩৩-এর তুলনায় বেশি থ্রাস্ট বা শক্তি উৎপাদন করলেও, এর সার্ভিস লাইফ বা কার্যকাল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। প্রযুক্তিগতভাবে আরডি-৯৩-এর সার্ভিস লাইফ যেখানে মাত্র ২ হাজার ২০০ ঘণ্টা, সেখানে আরডি-৩৩ ইঞ্জিনের সার্ভিস লাইফ ৪ হাজার ঘণ্টা।
তোপিচকানভ উল্লেখ করেন, চীন তাদের এফসি-১৭ জেটের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়ার কাছে আরডি-৯৩ ইঞ্জিন চেয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি এবং ড. মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবং ইউপিএ উভয় সরকারই সেই সময়ে পাকিস্তানে এই ইঞ্জিন স্থানান্তরের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালের গোড়ার দিক থেকেই একটি ত্রিপক্ষীয় রাশিয়া-চীন-পাকিস্তান চুক্তির অধীনে রাশিয়া জেএফ-১৭-এর জন্য পুরোপুরি সংযোজন করা আরডি-৯৩ ইঞ্জিন সরবরাহ করে আসছে। বর্তমানে পাকিস্তান ইঞ্জিনটির একটি মোডিফায়েড সংস্করণ তৈরির জন্য আগ্রহ দেখালেও, সেই সংস্করণটি এখনো সম্পূর্ণরূপে তৈরি হয়নি। তবে চুক্তির বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দিল্লিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা
এই রুশ প্রতিরক্ষা চুক্তির খবর প্রকাশ হওয়ার পর ভারতের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ গত শনিবার সরকারের কাছে স্পষ্ট জবাবদিহি দাবি করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন ভারতের ‘একসময়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কৌশলগত মিত্র’ রাশিয়া, চীনের তৈরি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন সরবরাহ করে পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জবাবে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কংগ্রেসের এই সমালোচনাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। বিজেপি এই খবর প্রচারকে ‘বেপরোয়া তথ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং কংগ্রেসকে অভিযুক্ত করে যে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ধরনের ইস্যু উত্থাপন করে দেশকে সমর্থন করার পরিবর্তে ‘শত্রুর পক্ষ’ বেছে নিয়েছে।