নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচন:

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে মামদানি?

মামদানী
  © সংগৃহীত

এখন পুরো নিউইয়র্ক অপেক্ষা করছে একটি নতুন সূর্য দেখবে বলে, যার ঝলমলে আলোয় প্রত্যাশিত ৪ নভেম্বর রাতে জেগে উঠবে পৃথিবীর রাজধানী টাইমস স্কোয়ারের নতুন এক ইতিহাসের নাম—জোহরান মামদানি নাকি অ্যান্ড্রু কুমো, তা জানাবে ভোটের বাক্স।

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে  মামদানি?

কারণ, সাম্প্রতিক ইতিহাসে নিউইয়র্ক সিটির কোনও নির্বাচনকে ঘিরে এমন উত্তেজনা দেখা যায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশি জনসমাজের মধ্যে। নির্বাচনের ময়দান কেবল নিউইয়র্কে সীমাবদ্ধ নয়, বরং গোটা আমেরিকা— এমনকি বিশ্বমিডিয়াও চোখ রাখছে ২০২৫ সালের ৪ নভেম্বরের এই ভোটে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত একাধিকবার মন্তব্য করেছেন এই নির্বাচনের প্রসঙ্গে। তার কারণও সেই একটাই—এবারের প্রতিযোগিতা একেবারে অন্যরকম।

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে  মামদানি?

একদিকে কুইন্সের তরুণ ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি, যিনি প্রাইমারিতেই দলীয় জায়ান্টদের হারিয়ে সাড়া ফেলেছেন। অন্যদিকে প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো, যিনি স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং শেষ সময়টায় ব্যবধান কমিয়ে আনছেন। আর রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিউয়া, যিনি ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস’ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত, তিনিও ভোটের অঙ্কে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলছেন—বিশেষত মামদানি-বিরোধী ভোট ভাগ করে দিয়ে।

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে  মামদানি?

প্রথম সপ্তাহান্তে আগাম ভোট বা প্রাথমিক ভোটে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। নিউইয়র্ক সিটি ইলেকশন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শুরুর দুই দিনেই ভোট দিয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজারেরও বেশি ভোটার—যা ২০২১ সালের পুরো আগাম  ভোটের প্রায় সমান। পাঁচ বোরোর হিসাব বলছে, ব্রুকলিনে ভোট পড়েছে প্রায় ৪৯,৫০০, কুইন্সে ৩৮,২০০, ম্যানহাটনে ২৯,০০০, ব্রঙ্কসে ৩৪,৮০০ এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে ১২,৫০০। এ হার যথাক্রমে ২০২১ সালের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি।

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে  মামদানি?

জোহরান মামদানি এখনো ভোটে এগিয়ে আছেন, তবে নতুন জরিপে ব্যবধান কমে এসেছে। সাফফোক ইউনিভার্সিটির জরিপে দেখা গেছে, মামদানি ৪৪ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন, কুমোর সমর্থন ৩৪ শতাংশ, আর রিপাবলিকান স্লিউয়া ১১ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামদানির ২০ পয়েন্টের লিড এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০-এ।

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে  মামদানি?

মামদানির প্রচারণা মূলত সাশ্রয়ী নগরজীবনের স্বপ্ন নিয়ে—বিনামূল্যে বাস, সার্বজনীন শিশু যত্ন, সবার জন্য আবাসন, এবং জলবায়ু ন্যায়ের প্রতিশ্রুতি। ফরেস্ট হিলস স্টেডিয়ামে তাঁর শেষ বড় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কার্টেজ এবং সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। প্রায় ১০ হাজার মানুষের সেই জনসভায় “নিউইয়র্ক ইজ নট ফর সেল” শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল কুইন্স।

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে  মামদানি?

অন্যদিকে অ্যান্ড্রু কুমো মরিয়া প্রচারণায় নেমেছেন। মুসলমান, খ্রিস্টান ও লাতিনো রক্ষণশীল গোষ্ঠীর ভোট টানার চেষ্টা করছেন তিনি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তিনি ইসলামোফোবিক বক্তব্যের জন্য সমালোচিত হলেও, মামদানির উদারনৈতিক অবস্থান—যেমন যৌনকর্মীদের অধিকার, পুলিশ বাজেট সংস্কার ও অভিবাসী নীতি—নিয়ে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। কুমো এই বিভাজনকে দক্ষভাবে কাজে লাগাচ্ছেন।

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে  মামদানি?

এরিক অ্যাডামস, যিনি নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে গিয়ে কুমোকে সমর্থন দিয়েছেন, সেই সমর্থনও কুমোর প্রচারণায় নতুন গতি এনেছে। জরিপে দেখা গেছে, হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যে এখন দুইজন প্রায় সমান অবস্থানে। স্বাধীন ভোটারদের মধ্যে কুমো ১০ পয়েন্টে এগিয়ে, যা আগে ১৮ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল।

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে  মামদানি?

রিপাবলিকান কার্টিস স্লিউয়া আপাতদৃষ্টিতে পিছিয়ে থাকলেও, তিনি নির্বাচনের ফাইনাল অঙ্কে ‘কিং-মেকার’ হতে পারেন। তাঁর ভোটারদের দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে ৩৬ শতাংশ কুমোকে এবং মাত্র ২ শতাংশ মামদানিকে বেছে নিয়েছেন—যা র‍্যাঙ্ক-চয়েস ভোটিং ব্যবস্থায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থাৎ, প্রথম রাউন্ডে স্লিউয়া বাদ পড়লে সেই ভোট কুমোর দিকে গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে।

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে  মামদানি?

বাংলাদেশি কমিউনিটি এখন বিভক্ত। শুরুতে তারা একচেটিয়া ভাবে জোহরান মামদানির পক্ষে ছিলেন—কারণ  তাঁর রাজনৈতিক ভাষা তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণামূলক। কিন্তু শেষ সপ্তাহগুলোতে রক্ষণশীল অংশের কিছু ভোটার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইস্যুতে কুমোর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও দুইপক্ষের প্রচারণা তুঙ্গে।

ইতিহাসের কতদূরে দাঁড়িয়ে  মামদানি?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি বড় কোনও অঘটন না ঘটে, তাহলে জোহরান মামদানি ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হবেন এবং নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নাম লিখবেন। “নিউইয়র্ক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে,” বলেছেন কুইন্সের তরুণ স্বেচ্ছাসেবক ইব্রাহিম আহমেদ, যিনি গত এক বছর ধরে মামদানির প্রচারণায় যুক্ত। “আমরা এমন এক নেতা চাই, যিনি কেবল নিউইয়র্ক নয়—মানুষের জীবনযাত্রাকে বদলে দিতে পারবেন।”


মন্তব্য