ইয়েমেনে সৌদির বিমান হামলা

সৌদি আরব
  © সংগৃহীত

ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সৌদির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানে বিমান হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে। শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাত-সমর্থিত সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি) জানায়, ইয়েমেনের হাদরামাউত প্রদেশে তাদের বাহিনীকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। এখনও এ বিষয়ে সৌদি আরব এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। 

এই অভিযোগ এমন এক সময় এলো, যখন সৌদি আরব সম্প্রতি দক্ষিণ ইয়েমেনে অগ্রসর হওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীকে দখলকৃত এলাকা থেকে সরে যেতে সতর্ক করেছিল। ঘটনাটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ভেতরের ঐক্যকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

এসটিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাদরামাউত প্রদেশে সৌদি বিমান হামলা হয়েছে। তবে এতে হতাহতের কোনো নিশ্চিত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। এসটিসির পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি আমর আল-বিধ বলেন, শুক্রবার তাদের যোদ্ধারা পূর্ব হাজরামাউতে অভিযান চালাচ্ছিলেন। এ সময় তারা একাধিক অতর্কিত হামলার মুখে পড়েন। ওই হামলায় কাউন্সিলের দুই যোদ্ধা নিহত এবং ১২ জন আহত হন। এর পরই সৌদি বিমান হামলা হয় বলে তিনি দাবি করেন।

হাজরামাউতের উপজাতীয় জোটের এক শীর্ষ সদস্য ফায়েজ বিন ওমর এপিকে বলেন, তার ধারণা এই বিমান হামলা ছিল এসটিসিকে এলাকা ছাড়ার জন্য একটি সতর্ক সংকেত। প্রত্যক্ষদর্শী আহমেদ আল-খেদ জানান, হামলার পর তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত সামরিক যান দেখেছেন, যেগুলো এসটিসি-সমর্থিত বাহিনীর হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

এসটিসির স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এআইসি মোবাইল ফোনে ধারণ করা কিছু ভিডিও সম্প্রচার করে, যেগুলোতে হামলার দৃশ্য দেখানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়। একটি ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে সৌদি যুদ্ধবিমানকে দায়ী করতে শোনা যায়।

এ বিষয়ে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা এপির মন্তব্য চাওয়ার অনুরোধে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি। তবে বৃহস্পতিবার সৌদি আরব দক্ষিণ ইয়েমেনের আমিরাত-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলকৃত এলাকা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

চলতি মাসের শুরুতে এসটিসি হাজরামাউত ও মাহরা প্রদেশে প্রবেশ করে। এতে সৌদি-সমর্থিত ন্যাশনাল শিল্ড ফোর্সেস সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। এসব পদক্ষেপ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ভেতরে নতুন করে বিভাজন তৈরি করেছে। সম্প্রতি এসটিসি-সমর্থকরা দক্ষিণ ইয়েমেনের পতাকা আরও বেশি করে উত্তোলন করছেন। উল্লেখ্য, ১৯৬৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ইয়েমেন ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী আদেনে দক্ষিণ ইয়েমেনকে আবার আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ হয়।

২০১৪ সালে হুথিরা রাজধানী সানা ও উত্তর ইয়েমেনের বড় অংশ দখল করার পর আদেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। হুথিবিরোধী এই শিবিরে থাকলেও সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এসটিসির সাম্প্রতিক তৎপরতা সৌদি আরব ও আমিরাতের সম্পর্কেও চাপ সৃষ্টি করেছে। যদিও দুই দেশ ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ওপেক জোটের সদস্য, তবুও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঞ্চলিক প্রভাব ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছে, ইয়েমেনে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারে সৌদি আরবের উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানায়। একই সঙ্গে দেশটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নে সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইরান-সমর্থিত হুথিরা সানা দখল করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে নির্বাসনে পাঠায়। ইরান অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ অস্বীকার করলেও যুদ্ধক্ষেত্র ও সমুদ্রপথে ইরানি অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে, যা জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়।

২০১৫ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহায়তায় সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। দীর্ঘ এক দশকের প্রায় অচলাবস্থার এই যুদ্ধে দেড় লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে। দেশটি ভয়াবহ মানবিক সংকট ও দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এদিকে হুথিরা ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লোহিত সাগরে শত শত জাহাজে হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক নৌপরিবহন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইয়েমেনে নতুন করে অস্থিতিশীলতা বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রও আবার সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিমান হামলা চালালেও, অক্টোবর মাসে মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে তা স্থগিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। 


মন্তব্য