রাঘব-বোয়ালসহ ১১ মাসে দুদকের জালে যতজন

দুদক
  © ফাইল ছবি

আওয়ামী সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১১ মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ধরা পড়েছে ২,৭৮৮ জন দুর্নীতিবাজ, যাদের মধ্যে রাঘব-বোয়ালও রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা ও চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, মোট আসামিদের মধ্যে ১,৪৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং ১,৩৫৬ জন চার্জশিটভুক্ত আসামি। এসব আসামির মধ্যে রয়েছেন ৩৪৩ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১১৪ জন ব্যবসায়ী, ৯২ জন রাজনীতিক এবং ৭১৫ জন বেসরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

সোমবার (৭ জুলাই) এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে গতি এসেছে। পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে বিশেষ করে গত ৬ মাসে অভিযোগ, মামলা ও চার্জশিট বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর দুদকের কাজের গতি বেশ বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে ৫ হাজার ৯২৯টি, অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৫৩০টি, মামলা হয় ২৫৫টি, চার্জশিট দেওয়া হয় ১৭৫টি, চার্জশিটভুক্ত আসামি ৫৩৮ জন, দুদকের মামলার মোট আসামি ৯৮৩ জ‌ন, যার মধ্যে রাজনীতিবিদ রয়েছেন ৬৮ সরকারি চাকরিজীবী ২১১ জন, জনপ্রতি‌নি‌ধি ১৪ জন।

দুদক থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, আওয়ামী সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত গত ১১ মাসে বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে ১২ হাজার ৮২৭টি অভিযোগ দুদকে জমা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৬৮টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়। এ সময়ে ৩৯৯টি মামলা ও ৩২১টি মামলার চার্জশিট দেয় দুদক। মাস হিসাবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বাধিক ৭০টি ও ৫৪টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আসামিদের মধ্যে ৩৪৩ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী ১১৪ জন, ৯২ জন রাজনীতিবিদসহ ১২৬৪ দুর্নীতিবাজ দুদকের জালে। ওই সময়ে ২২৩ জনের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী নোটিশ দেয় দুদক। একই সময়ে  ৯টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি (অভিযোগ থেকে অব্যাহতি) হয়। 

এর আগে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি-নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে ৪৩৯টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়। ২২৭টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি (অভিযোগ থেকে অব্যাহতি) হয় এবং ৪৮টি মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এসময়ে ৩২৮টি মামলা ও ৩৪৫টি মামলার চার্জশিট দিয়েছিল দুদক। এরইমধ্যে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অর্থাৎ আওয়ামী সরকারের পতনের পর আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রেকর্ডসংখ্যক অনুসন্ধান শুরু হলেও হঠাৎ মঈনউদ্দীন কমিশনের পদত্যাগে ছন্দপতন ঘটে। তবে আবদুল মোমেন কমিশন দায়িত্ব নিলে কাজে গতি ফিরে।

২০০৪ সালে গঠিত কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। এরপর যথাক্রমে সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী, গোলাম রহমান, মো. বদিউজ্জামান, ইকবাল মাহমুদ ও মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ যুগের অবসান হয়েছে। কিন্তু দুদকের ভাবমূর্তির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সর্বশেষ গত ১১ ডিসেম্বর ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। ৫ আগস্টের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান, অনুসন্ধান ও তদন্তে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটিকে।

সর্বশেষ আওয়ামী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার, সাবেক মন্ত্রী-এমপি, সাবেক শীর্ষ আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ব্যবসায়ী, পুলিশের শীর্ষ কর্তাসহ হাজারের বেশি ব্যক্তির দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছে দুদক। অধিকাংশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, ব্যাংকের ঋণ নিয়ে লুটপাট, অর্থ পাচার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, কমিশন বাণিজ্য, সরকারি ও বেসরকারি জমি-সম্পত্তি দখল, লুটপাটসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন।


মন্তব্য