কাল থেকে অভিযান
অবৈধ যান নিয়ন্ত্রনে সেই পুরানো পথে বিআরটিএ
- তানভীর আহমেদ
- প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ০৮:৩৫ PM , আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫, ০৮:৩৫ PM

দফায় দফায় মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন বন্ধের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেও তেমন কোনো সফলতা না পেয়ে এবার নতুন করে হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার যানবাহনের ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করেছে। আগামিকাল মঙ্গলবার থেকে এ নিয়ম পালনে মাঠ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
জানা গেছে, নতুন আদেশে বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ (বিশ) বছর এবং ট্রাক-কাভার্ডভ্যান প্রভৃতি মালবাহী মোটরযানের ক্ষেত্রে ২৫ (পঁচিশ) বছর ইকোনমিক লাইফ (চলাচলের যোগ্য) নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সরাদেশে একযোগে দিনে ও রাতে অভিযান পরিচালিত হবে জানিয়ে আজ সোমবার বিআরটিএর উপ-পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. হেমায়েত উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে উল্লেখিত ইকোনমিক লাইফ মেয়াদোত্তীর্ণ বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান প্রভৃতি মালবাহী মোটরযানের বিরুদ্ধে বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে একযোগে অভিযান চালাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে এর আগে ২০২৩ সালের মে মাসেও জারি করা হয়েছিল। যদিও তা পরে স্থগিত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর ৬ মাস সময় বেঁধে দিয়েছিল সড়ক থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন অপসারণের জন্য।
কিন্তু কার্যত মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-লেগুনা কিংবা ট্রাকের মতো যানবাহনগুলো সড়ক থেকে কোনোভাবেই সরানো যাচ্ছে না। বরং এসব যানবাহনের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নতুন রঙ করে সড়কে ছেড়ে দেয়া হয় আয়ুষ্কাল শেষ হওয়া যানবাহনগুলো। কেন সরানো যাচ্ছে না এ সকল যানবাহন? সরকার বলছে মালিকদের অনীহা। সড়ক নিয়ে কাজ করা একাধিক বেসরকারি সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ বলছেন সরকারের আইন প্রয়োগেও রয়েছে ঘাটতি। প্রশ্ন উঠেছে বিআরটিএ’র সক্ষমতা নিয়েও।
এছাড়া গত এপ্রিলের শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরানোর বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিআরটিএ। সেখানে বলা হয়- ঢাকা মহানগরী থেকে পুরনো বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ এই ধরনের মোটরযান অপসারণ করা হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঢাকা মহানগরী থেকে এসব মোটরযান অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মে মাস থেকে ২০ বছরের বেশি পুরনো বাস, মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরনো ট্রাক, কাভার্ডভ্যান প্রভৃতি মালবাহী মোটরযান ঢাকা মহানগরী থেকে অপসারণ করতে হবে।
সম্প্রতি ফের যানবাহনের ইকোনমিক লাইফ বা অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। যা আগামী ১লা জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৬এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক, কাভার্ডভ্যান প্রভৃতি মালবাহী মোটরযানের ক্ষেত্রে ২৫ বছর ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করলো।
এর আগে, ২০২৩ সালে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনেও একই বিষয় জানানো হয়। সেখানেও বলা হয়েছিল- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০২৩ সালের মে মাসের এক প্রজ্ঞাপনে- বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ট্যাংকারের ইকোনমিক লাইফ (অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল) নির্ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল হবে ২০ বছর ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের ২৫ বছর।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ই আগস্ট গঠিত নতুন সরকারের আমলে ‘যানজট ও বায়ুদূষণ’ নিরসনে পুরনো যানবাহন উঠিয়ে দেয়াসহ পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে দুই দফা বৈঠক হয়। একটি ২৪শে অক্টোবর ও অন্যটি হয় ১৯শে ডিসেম্বর। বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর একটি হলো- ছয় মাস পর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনের নিবন্ধন বাতিল করে সড়ক থেকে প্রত্যাহার এবং সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে ধ্বংস করে দিতে হবে। কিন্তু সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও সড়ক থেকে কোনো ভাবেই সরানো যায়নি মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনগুলো।
তবে সংশ্লিষ্ট খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক থেকে এসব গাড়ি সরছে না কারণ তারা বিআরটিএ কে গুরুত্ব দেয় না। বিআরটিএ’র ক্ষমতা নাই। তাদের জনবল নেই। এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এখন রাজনৈতিক বড় দল বিএনপি। এখন সড়ক নিয়ন্ত্রণ করে বিএনপিপন্থি পরিবহন শ্রমিকরা। সুতরাং এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানদের পরিবহন নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই। বিআরটিএ’র সাংগঠনিক সংস্কার করতে হবে। সক্ষমতা যেহেতু নেই, যানবাহন সরানোর সিদ্ধান্ত নিলে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট করবে, জনগণের ভোগান্তি হবে, সব অচল হয়ে যাবে।
সরকারের নিজস্ব গণপরিবহন থাকলেও সমস্যা ছিল না। বিআরটিসি নামের একট প্রতিষ্ঠান আছে, তার কিছুই নেই। জনগণের করের টাকা দিয়ে গাড়ি কেনা হয়, সে বাসগুলো নষ্ট করে ডাম্পিংয়ে ফেলে দেয়া হয়। ভাড়ায় খাটে তারা। সাধারণ যাত্রী পরিবহন তারা করে না। বাস মালিকরা তার মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি রাখতেই চাইবে। কিন্তু সরকারকে এটা সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু বাস মালিকরা কোনো কিছু শুনছেন না। আমাদের দেশে আইন না মানার একটা সংস্কৃতি চলে আসছে। তারা জানে আইন না মানলে শাস্তি হবে না। তাছাড়া সব রাজনৈতিক দলের এজেন্ডার মধ্যেও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলো যদি চাইতো এক সপ্তাহের মধ্যে এটা সমাধান হয়ে যেতো।
বিআরটিএ'র সূত্র জানায়, দেশে নিবন্ধিত বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৮১টি। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৭৬১টি বাস-মিনিবাসের বয়স ২০ বছরের বেশি। ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বাস-মিনিবাসেরই আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। এ ছাড়া নিবন্ধিত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ট্যাংকলরির সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ১৭৪। এর মধ্যে ২৫ বছরের চেয়ে বেশি পুরনো এ ধরনের যানবাহনের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৪৮১।