কারা ছিল বাতিল হওয়া সেই ১২ ফ্ল্যাটের মালিক?
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫০ PM , আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫০ PM

অনিয়ম ও দলীয় বিবেচনায় দেওয়া ১২ টি সরকারী ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ২৭৪তম বোর্ড সভায় ওই সব ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করা হয় বলে মঙ্গলবার মন্ত্রনালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। কিন্তু কারা ছিল বরাদ্দ পাওয়া সেই ১২ ফ্ল্যাটের মালিক?
জানা গেছে, ধানমন্ডিতে নির্মাণাধীন ভবনে অবসরপ্রাপ্ত ১২ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গণ অভ্যত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে অনিয়ম করে তাদের এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ৬৩ নম্বর বাড়িতে এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ পান তারা।
মঙ্গলবার অবসরপ্রাপ্ত ১২ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওই সব ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা ভেঙে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
যাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল হয়েছে, তারা হলেন- সাবেক অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মো. জহুরুল হক (ফ্ল্যাটের আয়তন ৪ হাজার ১০৫ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৩১৫ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান (ফ্ল্যাটের আয়তন ৪ হাজার ৩০৮ বর্গফুট), সাবেক সচিব এম এ কাদের সরকার (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব আসলাম আলম (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট), সাবেক সচিব আকতারী মমতাজ (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট), সাবেক সচিব মো. সিরাজুল হক খান (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৩১৫ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৩১৫ বর্গফুট), সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সাবেক সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৩১৫ বর্গফুট) এবং সাবেক সিনিয়র সচিব এস এম গোলাম ফারুক (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট)।
ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ৬৩ নম্বর বাড়িটি মূলত সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি। সেখানে ১৪ তলা একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ওই ভবনের ১২টি ফ্ল্যাট নীতিমালা ভেঙে তৎকালীন আমলা ও বিচারকদের বরাদ্দ দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের ওই সব ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়ে। তাতে বলা হয়, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত’ সচিব পদমর্যাদার ১২ কর্মকর্তাকে ‘পুরস্কৃত করতে’ শেখ হাসিনার আমলে পরিকল্পিতভাবে ফ্ল্যাট দেয়া হয়। এরপর এই অভিযোগ তদন্ত করে দুদক বলেছে, তারা ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করে।
দুদকের তদন্ত ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ২৭৪তম বোর্ড সভায় ওই সব ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করা হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।