সেই অচ্ছুতরাই ছুটে এলেন রক্ত দিতে

বার্ন
  © সংগৃহীত

সমাজে তারা বরাবরই অচ্ছুত। তাদের জাত-পাত নেই। সেজন্য তাদের সাথে নূন্যতম মানবিক আচরণ করতেও আমাদের কার্পণ্যের কমতি থাকে না। কিন্তু সেই অচ্ছুত মানুষগুলোই ছুটে এলেন হাসপাতালে। কারণ রক্তের সম্পর্ক না হলেও মানবিকতা ছুঁয়ে গেছে তাদের হৃদয়েও। গতকাল মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু শিক্ষার্থীদের রক্ত দিতেই দেখা গেছে একদল হিজড়াদের।

তাদরেই একজন আঁচল বলেন, “আমরা হিজড়া হলেও, এই ছোট শিশুদের কষ্ট দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। তাই তাদের জন্য রক্ত দিতে ছুটে এসেছি।”

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে আবেগভরে কথাগুলো বলছিলেন সে।

আঁচলের মতোই এমন ২০০ জন তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের মানুষ এসেছেন বিমান দুর্ঘটনার শিকার শিশু ও আহতদের রক্ত দেওয়ার জন্য।

আঁচল বলেন, নিষ্পাপ শিশু ও আহতদের রক্ত দেওয়ার জন্য আমরা ২০০ জনের মতো এখানে এসেছি। এখানের আহতরা আমাদের ভাইবোনের মতো। মূলত দুটো দল এখানে এসেছে, একটি মগবাজারের। অপরটি বনানীর।

সম্প্রদায়ের লিডার বেলুনি বলেন, ছোট বাচ্চাদের কষ্ট দেখে আমরা সহ্য করে থাকতে পারিনি। তাই আমি আমার লোকজন নিয়ে চলে এসেছি।

স্বেচ্ছাসেবকরা বলছেন, যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের রক্ত গ্রহণ করা হবে।

এর আগে সোমবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়েছে।

দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার করা শুরু করে। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। 

মর্মান্তিক এ বিমান দুর্ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৭ জনে। এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শতাধিক।


মন্তব্য