জুলাই যোদ্ধেদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫২ AM , আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫২ AM
-11806.jpg)
রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া এভিনিউতে জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক জুলাই যোদ্ধা আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন জুলাই যোদ্ধারা। একই সময়ে রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, ফেনী ও অন্যান্য জেলাতেও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কারণে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সকালে তিন দফা দাবিতে দক্ষিণ প্লাজায় সমবেত হন জুলাই যোদ্ধারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিছিলকারীদের ভিড় বাড়ে। সকাল ১১টার দিকে একদল সংসদ ভবনের ১২ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মঞ্চের সামনে অবস্থান নেয়। পরে তারা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। বিক্ষুব্ধরা ব্যারিকেডে আগুন ধরিয়ে দেয়। অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে সনদে সংশোধনী আনার ঘোষণা দিলেও বিক্ষোভকারীরা সরে না গেলে পুলিশ অভিযান চালায়।
পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিক্ষোভকারীরা আশপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষের সময় পথচারীদের ভিডিও করা মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফুটেজ মুছে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। পুলিশের দাবি, তাদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের গাড়ি ও নিরাপত্তা চৌকি।
সংঘর্ষের কারণে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে বিকেলে খামারবাড়ি ও ধানমণ্ডিসহ আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে।
তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এগুলো জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করা। অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সনদের ৫ নম্বর দফায় সংশোধন আনা হয়েছে।
দফায় দফায় সংঘর্ষ ও উত্তেজনার মধ্যেই বিকেল ৪টার পর সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আহত ২০ জনকে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা এক আহত যোদ্ধার কৃত্রিম হাত সংঘর্ষের তীব্রতার সাক্ষী হয়ে থাকে।
বিক্ষোভ শেষে সন্ধ্যায় যোদ্ধারা সংসদ ভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। পরে তাঁরা বাইরে থেকেই বক্তব্য দেন। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ এবং মামলা প্রক্রিয়াধীন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইটপাটকেলের আঘাতে কর্মকর্তাসহ ১০ জন আহত হয়েছেন এবং পাঁচটি গাড়ি ও অস্থায়ী কন্ট্রোলরুমে আগুন দেওয়া হয়েছে।
জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা সৌরভ ঘোষণা দেন, তিন দফা দাবি আদায় ও হামলার প্রতিবাদে রোববার দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সারাদেশে মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। তাঁর অভিযোগ, জুলাই সনদের পঞ্চম ধারায় আহত ও শহীদ পরিবারদের আইনি নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করা হয়নি, যা প্রতারণা বলে দাবি করেন তিনি।