এক রাজনৈতিক বিষবৃক্ষের ইতিহাস
- প্রফেসর হায়াত হােসেন
- প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৬ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২৫ PM

উপরের শিরোনামটি দেশের কোন দলটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নিশ্চয়ই কারো বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। আসলে সেদিন এক কম বয়সী শিক্ষিত ভদ্রলোক আমাকে প্রশ্ন করলেন 'আচ্ছা আংকেল বলেনতো আওয়ামী লীগ পার্টিটা এরকম কেন? সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার এসব ছাড়া আর কিছুই বুঝেনা। জন্মের পর থেকেই এটা দেখে আসছি এখনো কোন পরিবর্তন নাই। ভাবলাম হাসিনা চলে গেলে বা মরে গেলে এসব বন্ধ হবে এখন দেখছি বিদেশের মাটিতেও তারা শুরু করেছে। একজন সিরিয়াল খুনী ও ভয়ংকর দুর্নীতিবাজ নেত্রী হিসেবে হাসিনার কথা মোটামুটি গোটা বিশ্ব জানে তাই বিদেশেও তার উপস্থিতিতে প্রবাসীদের ক্ষোভ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ড: ইউনূসের মত একজন নোবেল লরিয়েট যাকে গোটা বিশ্বের মানুষ সম্মান করে তদুপরি যিনি একজন অস্থায়ী ও নিরপেক্ষ সরকার প্রধান তাকে কেন অপমান করার এত হীন চেষ্টা? আমাদের দেশ ও গোটা জাতি কত ছোট হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের কাছে এটা আমাদের কাছে ভীষণ লজ্জার কথা নয় কি? এর কারণও ইতিহাসটা কি বলতে পারেন?
একজন ইতিহাসের লোক হিসেবে সে আমাকে রীতিমত প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছিল এসব নিয়ে। তখন আমি বললাম, দেখ, এটার শুরু বহু যুগ আগে যখন তোমার জন্ম হয়নি। দেশ বিভাগের আগে অর্থাৎ ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান নামক স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের দাবীতে যখন মুসলিম লীগ ডাইরেক্ট একশন ডে বা পুর্ণ ধর্মঘট ও অবরোধ ডাকে তখন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর এই আহবান কে সফল করার জন্য পুর্ব বাংলার প্রধান মন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দী সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামেন। অনেক হিন্দু মারা যায় এবং অনেকে শহর থেকে পালিয়ে যায়। ঠিক তখন গোপাল পাঠা নামে এক হিন্দু কসাই বাঙালী হিন্দু, শিখ,খোট্টা ও বিহারীদের সংগঠিত করে এক ভয়ংকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং কলকাতাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি থেকে রক্ষা করে যে কারণে গোপাল পাঠা কলকাতায় এক অবিস্মরণীয় নাম হয়ে আছে।
এরপর হিন্দুদের পাল্টা আক্রমণে বহু মুসলিম পরিবার ও জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। শেষ পরিসংখানে 'দি গ্রেট কেলকাটা কিলিং অফ ১৯৪৬' -এ দেখা যায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মারা যায়, ২লক্ষ মা বোন সম্ভ্রম হারায় এবং দেড় কোটি মানুষকে ভিটা-মাটি ছাড়তে হয়। এটাই বলা যায় বিশ্বের বৃহত্তম অভিবাসন। পুরা ঘটনাটাই ছিল তৎকালীন ভারতের হিন্দুও মুসলিম নেতাদের চরম নির্বুদ্ধিতার ফল। তো এই রায়টের সময় সোহরাওয়ার্দীর লাঠিয়ালদের মধ্যে একজন ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, যাকে পিনাকী ভট্টাচার্য সোহওয়ার্দীর বডিগার্ড হিসেবে অভিহিত করেন। অনেকেই হয়তো এই ইতিহাস জানেননা। কথিত আছে মন্ত্রী হয়েও সোহরাওয়ার্দী ঐ সময় গুন্ডা বাহিনী নিয়ে অনেক হিন্দু পাড়ায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন যে কারণে ব্রিটিশ গেজেটে একাধিকবার তাকে গুন্ডা ও সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যদিও এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র হিসেবে শেখ মুজিবের কোন উল্লেখ ছিলনা।
দেশ বিভাগের পর সংগত কারণেই শেখ সাহেব সোহরাওয়ার্দীর ডানহাত হয়ে পড়েন এবং ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর সব সিনিয়র নেতাকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে তিনি পার্টির সভাপতি হয়ে যান। তার মৃত্যুর পর সাময়িক স্বস্তি ও শান্তির অধ্যায় পার হয়ে গেলে তার বিষধর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর দেশটার কিহলো সেটাতো বলার অপেক্ষা রাখেনা। এমন ভয়ংকর ডাইনী ও দেশবিক্রেতা নেত্রী ও তার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে জনগণের ঐক্য ছাড়া কোন বিকল্প নাই। কথায় আছেনা "Liberty is the price of eternal vigillance" বা সার্বক্ষণিক সচেতনতাই স্বাধীনতা রক্ষার মূল উপায়।
লেখক: সাবেক অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।