ভয় কেটে গেছে : নাহিদ
- গাইবান্ধা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫৭ PM , আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৬ PM

বাংলাদেশে আর কোনো ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠতে দেবে না মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘২০২৪ সালে আমরা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার জন্য রাজপথে নেমেছিলাম। সেই সরকার পতন হয়েছে। কিন্তু নতুন দেশ গঠন এখনও হয়নি। এবার আমরা সেই নতুন দেশ গড়ার আন্দোলনে নেমেছি। গাইবান্ধা থেকেই সেই সংগ্রাম শুরু করেছি।’
মঙ্গলবার বিকেলে গাইবান্ধা পৌরপার্কে অনুষ্ঠানিকভাবে ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালেই আমাদের ভয় কেটে গেছে। বাংলাদেশে আর কোনো ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠতে দেবো না।’
তিনি বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষ রক্ত দিয়েছে। এক নতুন বাংলাদেশের জন্য। যেখানে কথা বলার জন্য কাউকে পুলিশের লাঠি, গুলি কিংবা নির্যাতনের শিকার হতে হবে না। ২০২৪ সালেই আমাদের ভয় কেটে গেছে।
নতুন দেশ গড়ার ডাক দিয়ে গাইবান্ধা থেকে সেই সংগ্রাম শুরু করেছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গাইবান্ধার মানুষ দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গাইবান্ধার ছয়জন শহীদ হয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ নতুন স্বাধীনতার পথ তৈরি করেছে। এই আত্মত্যাগ এনসিপি এবং বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল স্মরণ রাখবে।’
তিনি সবাইকে সাহস করে এলাকার সমস্যা তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে কথা বলবেন, মত প্রকাশ করবেন। এনসিপি আপনাদের পাশে আছে।’
এর আগে সকালে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরের পীরগঞ্জে জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন এনসিপির নেতারা। শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি দল পরিবর্তন কিংবা ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান ঘটেনি। অভ্যুত্থান ঘটেছিল একটি গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা অনেকে মনে করি, জুলাই আন্দোলন ছিল সরকার পতনের আন্দোলন। কিন্তু এটা কেবল সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না, এটি ছিল নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। আমাদের মাঝেও কিছু হতাশা রয়েছে, কারণ আমরা এখনো সম্পূর্ণ বিচার দেখতে পারিনি। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে যে সংস্কার হওয়ার কথা তা সম্পূর্ণরূপে আমরা দেখতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দিতে চাই-যদি সরকার বা অন্য কেউ যদি মনে করে থাকেন জুলাই আন্দোলনে যারা রাজপথে নেমে এসেছিল তারা ঘরে ফিরে গেছে, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। আমরা আবু সাঈদের কবর থেকে ঘোষণা করছি বাংলার প্রতিটি পথে-প্রান্তরে আমরা যাব। বাংলার ছাত্র-জনতা ও তরুণ শ্রমিকদের আবারো রাজপথে নেমে আসতে আহ্বান জানাবো। আমরা ৩ আগস্ট ঢাকায় দেশের জনগণ ও শ্রমিকদেরকে সাথে নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য আবারও আন্দোলন শুরু করবো।’
এনসিপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমাদের যে ৩টি দাবি ছিল, বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান। আবু সাঈদের কবরের পাশ থেকে তা পর্ণব্যক্ত করছি। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দিকে যেতে হবে।’
পরে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে দুপুরে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন সড়কে জনসাধারণের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।
গাইবান্ধা থেকে শুরু হওয়া ‘জুলাই পথযাত্রা’ কর্মসূচি জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিতে এনসিপির সারা দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ।
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সাইফুল্লাহ হায়দার, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিয়ন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ডা. মাহমুদা আলম মিতু, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী ও সদস্য ফিহাদুর রহমান দিবস।
এ ছাড়া গাইবান্ধার সাত উপজেলার এনসিপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কর্মসূচিতে অংশ নেন।