‘ছাত্রদলের নারীবিদ্বেষী মুখোশ উন্মোচিত’
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫২ PM , আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫২ PM

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদের ডাকসু প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রোববার হাই কোর্টে রিট আবেদন করা ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন এক শিক্ষার্থী। তবে আলী হুসেন নামের ওই শিক্ষার্থীকে শিবির নেতা বানিয়ে দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিবিরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এদিকে আলী হোসেনের নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের বিরুদ্ধে পাল্টা বিক্ষোভ করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ওই বিক্ষোভে গত ১১ মাসে ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের করা ধর্ষণ ও নারী হেনস্তার হুমকির পোস্ট ও পত্রিকার কাটিং শেয়ার করে ছাত্রশিবির।
এর মাধ্যমে ছাত্রদলের নারীবিদ্বেষী মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির। একই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রদলের একজন নেতার বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর মন্তব্য করায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র শিবির।
আজ বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম এ প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ‘গত ১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই-৩৬ হলে বিগত এক মাসে রাত ১১টার পরে হলে প্রবেশ করা ৯১ জন শিক্ষার্থীকে প্রশাসন নোটিশ করে। সেই ৯১ জনকে উদ্দেশ্য করে রাবি ছাত্রদলের শাহ-মখদুম হল শাখার সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান মিলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বিনা পারিশ্রমিকের যৌনকর্মী বলে শেমিং করেন। এটি শুধু সংশ্লিষ্ট ছাত্রী, হল বা বিশ্ববিদ্যালয় নয়; বরং দেশের সমগ্র নারী সমাজের জন্য চরম অবমাননাকর একটি মন্তব্য। নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায় থেকে এ ধরনের নিন্দনীয় মন্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এমন আপত্তিকর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ‘ছাত্রদলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত তাদের নেতৃবৃন্দ নিয়মিতভাবে নারীদের নিয়ে স্লাটশেইমিং, বুলিং ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে আসছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম নিজে নারী হয়েও ঢাবি নারী শিক্ষার্থীদের সেবাদাসী আখ্যায়িত করে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন হিজাব পরিহিত নারীদের বিরুদ্ধে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করেন। ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আল ইমরান নিপ্পনও নারীদের নিয়ে অকথ্য ভাষায় মন্তব্য করেছেন।’
এতে বলা হয়, ‘শুধু তাই নয়, ডাকসুতে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী জুমাকে নিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাসান আল আরিফ অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। চবির ছাত্রদলের আরেক নেতা জুমাকে নর্তকী আখ্যা দিয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ডে ইতোমধ্যে ছাত্রদলের নারীবিদ্বেষী মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।’
ছাত্রদলের সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নারী নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি ছাত্রদলের নতুন কোনো ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরে তারা নারীবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং ধারাবাহিকভাবে নারীদের সম্মানহানি করে আসছে। ২০০২ সালে বুয়েটের নারী শিক্ষার্থী সাবেকুন্নাহার সনিকে হত্যা, একই বছর ঢাবির শামসুন্নাহার হলে ও রোকেয়া হলে শত শত শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করে। শুধু তাই নয়, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বিগত এক বছরে প্রায় ৪৪টি ধর্ষণের ঘটনা ছাত্রদলের সংশ্লিষ্টতার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। যশোরের ঝিকরগাছায় ফুল কিনতে আসা এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলায় পুলিশ ডেকে বন্ধুকে ধরিয়ে দিয়ে তার হবু স্ত্রীকে ধর্ষণ, বরিশালে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী, পাবনায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী, নেত্রকোণায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রদল। এমনকি নিজ দলীয় কর্মীও রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে। এসব ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, নারীবিদ্বেষ ও ছাত্রদল যেন একই সূত্রে গাঁথা।’
নিজেদের অপরাধ ঢাকতে ছাত্রদল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মতো দায় চাপানোর রাজনীতি বেছে নিয়ে শিবিরের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যাচার করছে বলেও অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, ‘আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত ঘটনাসহ উল্লেখিত ঘটনাসমূহের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে ছাত্রদলকে তাদের নারীবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড পরিহার করে শিক্ষার্থীবান্ধব ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এমন সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’