বিশাল জোটের পথে বিএনপি
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৯ AM , আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৯ AM

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশের রাজনীতিতে নতুন করে মেরুকরণ তীব্র হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট, আসন সমঝোতা ও নির্বাচনি ঐক্য নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও দর কষাকষি।
এরই মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি স্বীকৃতি ও সেই অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে ছয়টি দলকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে দেশের বৃহত্তম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে সংশ্লিষ্ট দলগুলো এটিকে এখনো নির্বাচনি জোট হিসেবে দেখতে রাজি নয়।
বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারা আরও বৃহত্তর নির্বাচনি জোট গঠনের চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণতন্ত্র মঞ্চ ও সিপিবির নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটও আসন্ন নির্বাচনে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে তুলতে চায়।
অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও বৃহৎ একটি নির্বাচনি জোট গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর কাছ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চেয়েছে দলটি। কিছু দলকে ইতিমধ্যে গ্রিন সিগন্যালও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এনসিপিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গেও পর্দার আড়ালে আলোচনা চলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বৃহত্তর নির্বাচনি জোট গঠনের কাজ চলছে। কাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি, তা যথাসময়ে জানানো হবে।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক, ইসলামি ও সমমনোভাবাপন্ন দলগুলোকে নিয়ে একটি নির্বাচনি জোট গঠন করতে চায়। ইতিমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত জোটগুলোকে আসনের তালিকা দিতে বলা হয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সহযোগী জোটগুলোর মধ্যে রয়েছে— গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), লেবার পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ।
এসব জোটের সঙ্গে বিএনপির একাধিক বৈঠকও হয়েছে। বৃহত্তর জোটে এলডিপি, গণফোরাম, বাম ঐক্য ও লেবার পার্টিও যুক্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জোটে যুক্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন যেসব নেতা:
১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “আমরা যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, নির্বাচনে একসঙ্গেই থাকব।”
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জানান, সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা ইতিমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে।
এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ ও বাম ঐক্যের আবুল কালাম আজাদও একই বক্তব্য দেন।
বিএনপির সহযোগী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, “আমরা বিএনপির জোটে আছি, আমি ঢাকার একটি আসনে লড়ব।”
গণতন্ত্র মঞ্চের অবস্থান:
গণতন্ত্র মঞ্চ এখনো জোটে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়নি। তবে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। জোটটির অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা ইলেকটোরাল পলিটিক্স নিয়ে আলোচনা করছি। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।”
মাহমুদুর রহমান মান্না ও হাসনাত কাইয়ুমও জানান, তফসিল ঘোষণার পরই বিএনপির সঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টির অবস্থান:
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “আমরা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে ছিলাম। তফসিল ঘোষণার পর জোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
অন্যদিকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জানিয়েছেন, তারা এখনো কোনো নির্বাচনি জোটে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হননি, তবে আলোচনা চলছে।
সিপিবি ও বাম দলগুলোর সঙ্গে আলাপ:
বিএনপি সম্প্রতি সিপিবি ও বাসদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। তবে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেছেন, “আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু হয়নি; সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এনসিপির সম্ভাবনা:
নতুন রাজনৈতিক শক্তি এনসিপিও নির্বাচনি জোট নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। দলের নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, “আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোটে যাচ্ছি না, তবে কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
সূত্র জানায়, এনসিপির একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে, অন্য অংশ জামায়াত বা নতুন জোট করার পক্ষে। সম্প্রতি এনসিপি, এবি পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণঅধিকার পরিষদের নেতারা আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৈঠক করেছেন।
ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা:
বিএনপি এখন জামায়াত ছাড়া অন্যান্য ইসলামি দল—যেমন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জমিয়তের নেতা মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবকে আসন ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকও আলোচনায় আছেন, যদিও দলটি এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি।
আলেম সমাজ নিয়ে ভাবনা:
বিএনপি দেশের আলেম সমাজ ও মাদরাসাভিত্তিক নেতৃত্বকে পাশে রাখতে চায়। এজন্য দলটির নেতারা ইতিমধ্যে হাটহাজারী মাদরাসা, হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও ছারছীনা পীরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন।
সব মিলিয়ে, নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতি এখন দুই বড় মেরূকেন্দ্রিক জোট গঠনের পথে। বিএনপি চাইছে বৃহত্তর বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে, যেখানে উদার গণতান্ত্রিক থেকে শুরু করে ইসলামি দল ও ছাত্রনেতাদের নতুন রাজনৈতিক শক্তি—সবাই থাকবে একই ছাতার নিচে।