হাদির মৃত্যু পরবর্তী ঘটনায় যা বলছে বিএনপি

বিএনপি
  © সংগৃহীত

আততায়ীর গুলিতে শহীদ হওয়া ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে বৃহস্পতিবার রাতে সংগঠিত বিক্ষিপ্ত ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।

হাদির মৃত্যুর ঘটনা পুঁজি করে একটি মহল দেশের শীর্ষ স্থানীয় দুটি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অপশক্তির অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র বন্ধে নৈরাজ্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। 

শুক্রবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। 

সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চের সভাপতি শরীফ ওসমান হাদি অকালে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বিএনপি এই হত্যাকাণ্ডকে কাপুরুষোচিত আখ্যা দিয়ে এর তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানায়। একই সঙ্গে হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনাকেও বিএনপি ন্যাক্কারজনক ও পরিকল্পিত বলে মন্তব্য করে।

সভায় উল্লেখ করা হয়, গতকাল মধ্যরাতে দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারসহ একাধিক গণমাধ্যম কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়, যা কর্মরত সাংবাদিকদের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এছাড়া সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউএজ সম্পাদক, দেশবরেণ্য সাংবাদিক নুরুল কবিরের ওপর হামলা এবং ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনাও গভীর উদ্বেগজনক বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।

তিনি বলেন, এসব ঘটনার মাধ্যমে একটি পুরনো ও চিহ্নিত মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যের পথে ঠেলে দিতে চাইছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ করে দেশে ফ্যাসিবাদের নতুন সংস্করণ কায়েমের অপচেষ্টা চলছে। সরকারের নাকের ডগায় এসব তৎপরতা চললেও সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয় বলেও সভায় অভিযোগ করা হয়। এর ফলে দেশি-বিদেশি পরিসরে সরকারের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়।

সভায় আরও বলা হয়, ইতিমধ্যে দেশের সব রাজনৈতিক দল এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি করছে। এমন পরিস্থিতিতে ধারাবাহিক সহিংসতা ও হামলার ঘটনাগুলো আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলেই বিএনপি মনে করে।

বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন,  খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারতের হাইকমিশনের কার্যালয় ও বাসভবনে হামলা, ঢাকায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের প্রধান কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অগ্নিসংযোগ, ছায়ানট ও ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারে হামলা, উত্তরা ও রাজশাহীতে ভাঙচুর, ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা, চট্টগ্রামে প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবন ও সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং সাংবাদিক নুরুল কবিরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, বিএনপি এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে দেশবাসীকে নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিকামী দেশবাসীর পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে জানায়, এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশকে ধ্বংস হতে দেওয়া হবে না। নৈরাজ্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। যে ঐক্যের মাধ্যমে অতীতে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জাতীয় নির্বাচন আদায় করা হয়েছিল, সেই ধারাবাহিকতায় দেশপ্রেমিক সকল শক্তিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি সভায় ইনকিলাব মঞ্চের সভাপতি শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাবলীর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিএনপির সভা থেকে অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানানো হয়।


মন্তব্য