ভিসা স্থগিতের হুঁশিয়ারি
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
- প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৯ AM , আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৯ AM

অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাজ্য। অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত নিতে রাজি না হওয়া দেশগুলোর ক্ষেত্রে ভিসা নীতি সীমিত/স্থগিত কিংবা বাতিল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ। সম্প্রতি রাজধানী লন্ডনে সম্প্রতি ৫ দেশের গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সংস্থা ‘ফাইভ আইস’- এর বৈঠকে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রধান এবং অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীরা৷ মূলত এই পাঁচটি দেশের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘ফাইভ আইস’৷
এমন এক সময়ে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই মন্তব্য করেছেন, যখন ছোট নৌকায় ফরাসি উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। এমন প্রেক্ষাপটে অভিবাসন ইস্যুতে বিরোধী দলগুলোর তীব্র চাপের মুখে রয়েছে সরকার, বাড়ছে জনরোষও।
সম্প্রতি ইভেট কুপারকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার, আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে তিনি নিয়োগ দেন শাবানা মাহমুদকে— যিনি ব্রিটেনের বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। যেদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শাবানা, সেদিনই সেদিনই রেকর্ড সংখ্যক এক হাজার ৯৭ জন অভিবাসী চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন৷
যুক্তরাজ্যের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘প্রধান অগ্রাধিকার’ উল্লেখ করে ফাইভ আইসের বৈঠকে শাবানা মাহমুদ বলেন, “বিশেষ করে যেসব দেশের নাগরিকেরা বৈধ নথিপত্র ছাড়াই আমাদের দেশে অবস্থান করছেন এবং যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে চায় না—এই বিষয়টি সুরাহা করার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যাদের আমাদের দেশে থাকার অধিকার নেই—তাদেরকে যেন আমরা ফেরত পাঠাতে পারি এবং তারা যেন তাদের নিজ দেশে ফিরে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “যদি কোনো একটি বা একাধিক দেশ তার নাগরিকদের ফেরত নিতে গড়িমসি করে, ক্ষেত্রে আমরা ফাইভ আইস সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে পারি। আর সেই পদক্ষেপ হবে ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে ভিসার সুযোগ কমিয়ে আনা। কারণ, সবাইকে নিয়ম মেনে চলতে হয়। যদি আপনার কোনো নাগরিকের আমাদের দেশে থাকার অধিকার না থাকে, তাহলে আপনাকে তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।”
ভবিষ্যতে কোন দেশগুলোকে ভিসা স্থগিতাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে তা অবশ্য নির্দিষ্ট করেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার অবশ্য আগেই বলেছেন, তিনি ভিসার ক্ষেত্রে ‘‘অনেক বেশি লেনদেনমূলক’’ পদ্ধতির পক্ষে৷ গত জুনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে কোনো দেশ যুক্তরাজ্যকে কতোটা সহযোগিতা করবে, তার ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভিসা ইস্যু করার বিষয়টি তিনি বিবেচনায় রেখেছেন।
অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলায় নতুন কৌশলে ‘ফাইভ আইস’
সাম্প্রতিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলায় ‘ফাইভ আইস’ জোটের মধ্যে সহযোগিতামূলক একটি চুক্তি হয়েছে। আর এই চুক্তি আমাদের অস্ত্রভাণ্ডারে আরেকটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে৷
তিনি বলেন, “এর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয় যে, অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং যাদের এখানে থাকার অধিকার নেই, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে আমরা আমাদের সব ধরনের কৌশল প্রয়োগে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো অভিবাসীর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে৷ এই সংখ্যাটি ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলেও উল্লেখ করেছেন শাবানা মাহমুদ৷
বার্তা সংস্থা পিএ-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চলতি বছর ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীর সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেড়েছে৷
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন ও অভিবাসী পর্যবেক্ষণ সংস্থা মাইগ্রেশন অবজারভেটরি-এর পরিচালক ড. ম্যাডেলিন সাম্পশন বলেন, “অনেক দেশেই প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর হার কম, কিন্তু সেসব দেশের নাগরিকদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ভিসার চাহিদা অনেক বেশি।”
উদাহরণ হিসেবে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই দেশগুলো ভিসা সীমিত করার হুমকির প্রতিক্রিয়া কীভাবে জানাবে, তা নির্ভর করছে তাদের নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার গুরুত্ব কতটা তার ওপর৷”
“এই প্রতিক্রিয়া দেশভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে ভারতসহ কিছু দেশের দীর্ঘদিন ধরে ভিসা সুবিধা আদায়ের ইতিহাস রয়েছে।”
তবুও নাখোশ বিরোধী দল
যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ক্রিস ফিলপ জানিয়েছেন, তার দল সরকারের ভিসা সীমিত করার সিদ্ধান্তে আশাবাদী হতে পারছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক বার্তায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এই লেবার সরকার শুধু কঠোর কথা বলছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এখন সত্যিকার অর্থেই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।”
তিনি আরো বলেন, যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের ফেরত নিচ্ছে না, তাদের জন্য যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা বন্ধ করা উচিত৷
ক্রিস ফিলপ বলেন, “লেবার পার্টির সরকার আমাদের সীমান্ত রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে খুবই দুর্বল, এবং আমি এর পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ দেখছি না।”
সূত্র : স্কাই নিউজ