মোবাইল প্রযুক্তি
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি প্রকৌশলীর বৈপ্লবিক উদ্যােগ
- কামরুজ্জামান বাবলু, ভার্জিনিয়া (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে:
- প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৬ PM , আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫১ PM
ইন্টারনেট ডাটার কল্যাণে গোটা বিশ্বের মানুষ যখন একে অন্যের সাথে মুর্হুতেই বাধাহীন যোগাযোগ করছেন প্রতিনিয়ত, তখন সেই ডাটা ছাড়াই যোগাযোগের নতুন দ্বারন্মোচনের প্রয়াসে ছুটে চলেছেন এক বাংলাদেশী প্রকৌশলী। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে থাকা মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানীগুলোর প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে গ্রাহকদের জন্য ভিন্নধর্মী এক মোবাইল সেবা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন নিরন্তর। তাঁর উদ্ভাবিত নতুন এ প্রযুক্তির ফলে গ্রাহকরা ইন্টারনেট ডাটা কেনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় থেকে মুক্তি পাবেন। ইতোমধ্যেই তাঁর চালুকরা ফাস্টনেট মোবাইল (Fastnet Mobile) যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে স্থানীয় গ্রাহকদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিখ্যাত কর্পোরেশনের উচ্চপদে আসীন বাংলাদেশী প্রকৌশলী মিয়া মো. নাসিমুল্লাহ এবার নিজেই উন্নত মোবাইল প্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিতে কাজ করছেন দিনরাত।
তিনি জানান, এটি মূলত সিম কার্ড ও ভয়েস বা ডেটা পরিকল্পনা প্রদানকারী একটি মোবাইল/সেলার ব্র্যান্ড। নতুন এ কোম্পানীটি যুক্তরাষ্ট্রর AT&T নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গ্রাহকদের উন্নত সেবা দিতে চায়। তাঁর পরিকল্পনায় রয়েছে ৫ জিবি ভয়েস, ডেটা প্ল্যান কিংবা অনলিমিটেড ডেটা প্ল্যানসহ অন্যান্য প্যাকেজ। এতে ই-SIM সাপোর্টসহ প্রচলিত দৃশ্যমান সিমেরও ব্যবস্থা থাকছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বসবাসরত যে কেউ ওয়েবসাইটের (www.fastnetmobile.com) মাধ্যমে উভয় ধরনের সিম-কার্ড কিট কিনতে পারবেন।
উক্ত মোবাইল ফোনের সুবিধার বর্ননায় তিনি বলেন, বিশেষ করে যেসব ফোন AT&T বা T-Mobile নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে, সেখানে ফাস্টনেট মোবাইলের মাধ্যমে ভয়েস ও ডেটা প্যাক সুবিধার পাশাপাশি গ্রাহকরা আন্তর্জাতিক কলের জন্য ফ্রি কল অফার সুবিধা পাবেন। অর্থ্যাৎ ইন্টারনেট বা ওয়াইফাই ডাটা ছাড়াই যে কেউ তার নিজ দেশ থেকে (উদাহরণস্বরূপ: ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান) থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী স্বজনের সাথে মোবাইলে ফ্রী কথা বলতে পারবেন। এটি একটি নতুন মাত্রা। কারণ, এতে গ্রাহকদের কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না।
এছাড়াও এটি মূলত একটি সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক ভিত্তিক অপারেটর (MVNO) যা সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো জুড়ে সেলুলার ভয়েস, টেক্সট এবং ডেটা প্ল্যান সরবরাহ করতে ফোর জি এলটিই বা ফাইভ জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। এটির বিভিন্ন প্ল্যান অফার আছে, যার মধ্যে রয়েছে আনলিমিটেড বিকল্প অপশন ও অন্য যেকোনো অপারেটরের তুলনায় কম দামে কথা বলার ব্যবস্থা। এটি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও কানাডা ও মেক্সিকোতে আনলিমিটেড টক টাইম/টেক্সট, আন্তর্জাতিক কল ও টেক্সট করার সুবিধা প্রদান করে। এছাড়া এ প্রযুক্তিতে কানাডা এবং মেক্সিকোতে কোনও রোমিং চার্জ কাটবে না। একই সঙ্গে ফাইভ জি গিগাবিট মোবাইল যোগাযোগ প্রযুক্তিসম্পন্ন ফাস্টনেটের শক্তিশালী সেলুলার এবং ডেটা কভারেজ রয়েছে। এটিএন্ডটি ফাইভ জি নেটওয়ার্কে ফাস্টনেট মোবাইল দেশব্যাপী ফোরজি এলটিই/ফাইভ জি ডেটা এবং ভয়েস পরিষেবা প্রদান, শহর ও শহরের বাইরে, মহাসড়ক এবং গ্রামীণ এলাকায় বৃহত্তম নেটওয়ার্ক কভারেজ প্রদান করে। তার এ নতুন প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল অপারেটরগুলোর মধ্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে।
তবে বাংলাদেশী প্রকৌশলী মিয়া মোহাম্মদ নাসিমুল্লার নতুন এ যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। তাঁর এ উদ্যেগের পেছনে রয়েছে নিরলস শ্রম ও একাগ্রতার এক বিরাট গল্প। যে গল্পের শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি থেকে স্নাতক পাশের পরেই। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে পড়ার আজন্ম ম্বপ্নচারী নাসিমুল্লাহ বনবিদ্যার ছাত্র হয়েও আকাশ জয়ের স্বপ্নে বিভোর থাকতেন সারাক্ষণ। তাই গ্র্যাজুয়েশন করার পরই দেশে চাকরীর চিন্তা বাদ দিয়ে বিদেশে পড়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার বিখ্যাত জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ পান কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুনবতি গ্রামের সন্তান মিয়া মো. নাসিমুল্লাহ। পরে ম্যাসন ইউনিভার্সিটির পড়াশুনা শেষে একে একে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনা কোরভো সেমিকন্ডাক্টর, নেক্সজেন পাওয়ার সিস্টেমস, সিরাকিউজ, নিউ ইয়র্ক গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজের প্রকৌশলী হিসেবে চাকুরী করেন। এসব প্রতিষ্ঠানে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ফলস চার্চে অবস্থিত নর্থরোপ গ্রুম্যান কর্পোরেশনে সিনিয়র প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন।
এছাড়াও নাসিমুল্লাহ সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস তৈরির প্রক্রিয়া, তড়িৎ প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিক্সের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ ও ব্যর্থতা বিশ্লেষণ, বৈদ্যুতিক সার্কিট বিশ্লেষণ, প্রতিরক্ষা এবং স্থান সম্পর্কিত যন্ত্রাংশ এবং ডিভাইসের জন্য যোগ্যতার প্রক্রিয়া নির্নয়েও কাজ করেন। এসবের মধ্যে উন্নত মাইক্রোস্কোপিক স্তর বিশ্লেষণ অন্যতম।
নাসিমুল্লার প্রতিষ্ঠিত এ নতুন উদ্যেগে ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী। ভবিষ্যতে আরো বেশি সংখ্যক বাংলাদেশীর কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির টার্গেট রয়েছে বলেও জানান তিনি।