বিশ্বে প্রথমবারের মতো ৪ ট্রিলিয়ন ডলার ছুঁল এক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান

এনভিডিয়া
  © ফাইল ছবি

বিশ্বের প্রথম কোম্পানি হিসেবে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের (৪ লাখ কোটি ডলার) বাজারমূল্যের মাইলফলক ছুঁয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার এ ঐতিহাসিক অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে এনভিডিয়ার শেয়ারদরও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার স্বল্প সময়ের জন্য এনভিডিয়ার বাজারমূল্য ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো কোম্পানির জন্য প্রথম। এই অর্জনে ওয়াল স্ট্রিটে এনভিডিয়ার অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৬৪ দশমিক ৪২ ডলারে পৌঁছায়।

এনভিডিয়ার বাজারমূল্যের এ উল্লম্ফন দেখিয়ে দিল, এআই খাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধি নিয়ে ওয়ালস্ট্রিট কতটা আত্মবিশ্বাসী। কারণ, এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পেছনে মূল চালিকাশক্তি এনভিডিয়ার উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিপ। নিউইয়র্কের আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডাকোটা ওয়েলথের সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার রবার্ট প্যাভলিক বলেন, ‘এই অর্জন দেখায় যে, কোম্পানিগুলো এখন এআইমুখী সম্পদ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, এবং এটিই ভবিষ্যতের প্রযুক্তি।’

তবে বছরের শুরুতে এনভিডিয়ার শেয়ার দাম ছিল দুর্বল। তখন চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের তৈরি কম দামি একটি এআই মডেল বাজারে আসায় এই খাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল।

এর আগে, ২০২৩ সালের জুনে এনভিডিয়া প্রথমবারের মতো ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্যে পৌঁছায়। মাত্র এক বছরের মধ্যে তা তিনগুণ বেড়ে ৪ ট্রিলিয়নে পৌঁছাল। এই গতি অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের চেয়েও দ্রুত। এই দুই প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বাজারমূল্যসম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি।

মাইক্রোসফট এখন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি, যার বাজারমূল্য ৩ দশমিক ৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার। বুধবার এর শেয়ার মূল্য ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৫০৩ দশমিক ৫১ ডলারে পৌঁছেছে।

এদিকে, চলতি বছরের এপ্রিলে তলানিতে যাওয়ার পর থেকে এনভিডিয়ার শেয়ার দাম প্রায় ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ধাক্কা লেগেছিল। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক অংশীদারদের সমঝোতার আশা শেয়ারবাজারকে চাঙা করেছে। এর ফলে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই সূচকে এনভিডিয়ার অংশ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অ্যাপল এবং মাইক্রোসফটের অংশ যথাক্রমে ৭ ও ৬ শতাংশ।

লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এলএসইজি) তথ্য অনুযায়ী, এনভিডিয়ার বাজারমূল্য এখন কানাডা ও মেক্সিকোর পুরো শেয়ারবাজারের সম্মিলিত মূল্যকে ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি যুক্তরাজ্যের সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির মোট মূল্যকেও অতিক্রম করেছে।

যদিও এনভিডিয়ার চিপ এআই খাতে আধিপত্য বজায় রেখেছে, তবে অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেটসহ অন্যান্য বড় ক্রেতারা বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের চাপের মুখে আছে—তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় খরচ নিয়ন্ত্রণে আনতে বলা হচ্ছে। এ ছাড়া, অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেস (এএমডি) ও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার বাজারের কিছু অংশ দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে অপেক্ষাকৃত সস্তা প্রসেসর দিয়ে।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এনভিডিয়া ৪৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এনভিডিয়া ৪৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব প্রত্যাশা করছে। তবে এই পরিমাণের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ এদিক-সেদিক হতে পারে। কোম্পানিটি দ্বিতীয় প্রান্তিকের তথ্য প্রকাশ করবে ২৭ আগস্ট।


মন্তব্য