কে এই ছিদ্দিক জোবায়ের?
- বিশেষ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৩ PM , আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪২ PM

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের মধ্যে মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি উঠেছিল সোমবার থেকে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হলেও এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত হবে কি না গভীর রাত পর্যন্ত সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। মূলত শিক্ষা সচিবের বাধার কারণেই পরীক্ষা স্থগিত করা যায়নি বলে জানা যায়। এরপরই শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। অবশ্য সোমবার দিনগত রাত ১২টার পর ২২ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানান শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরার। পরে ২৪ জুলাইয়ের পরীক্ষাও স্থগিত ঘোষণা করেন তিনি।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষাসচিবের পদত্যাগের দাবিতে সরব হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তারা প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এরই মধ্যে তার প্রত্যাহারের খবর এলো।
সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা পরীক্ষা পেছানোর কথা বললেও মূলত শিক্ষা সচিব পদে থাকা ছিদ্দিক জোবায়ের বিষয়টিকে পাত্তাই দেননি। বরং উল্টো তিনি ব্যাপরটিকে হাল্কা করে দেখতে বলেন উপদেষ্টাদের। শুধু তাই ই নয়, তিনি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটিকে অনেকটা তাচ্ছিল্যও করেন। এ সময় তিনি "২০/৩০ জন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার সাথে পরীক্ষা পেছানোর কি যৌক্তিকতা রয়েছে" বলেও প্রশ্ন তোলেন বলে একটি সূত্র জানায়। সেজন্যই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণার পরেও প্রথমে পরীক্ষা পেছাতে দেননি এ আমলা।
জানা গেছে, ছিদ্দিক জোবায়ের মূলত সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন কান্ড করেছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়। আওয়ামী ব্লকের বাম আদর্শের আমলা হিসেবেই পরিচিত এই ছিদ্দিক জোবায়ের পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন সে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর মানি কালেক্টর হিসেবেই পরিচিত ছিল। একই মন্ত্রনালয়ে প্রবল প্রতাপের সাথে ২০২১ সাল পর্যন্ত চাকরির পর অবসরে গেলেও আবার নসরুল হামিদ বিপুর আনুকুল্যে জ্বালানি খাতে কনসালটেন্ট হিসেবেও নিয়োগ পান তখন।
বাংলাকন্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ হাসিনার সময় তখন সরকারী কলেজগুলােয় ৬১০ জন ছাত্রলীগের চিহৃিত ছেলেদের নিয়োগ দেন এই ছিদ্দিক জোবায়ের। এখান থেকে তিনি তখন প্রায় শত কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেন বলে একটি সূত্র জানায়।
এদিকে গত বছর অক্টোবরে শিক্ষা সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়ে মন্ত্রনালয়ের সমন্বয় সভায় তৎকালীন মাউশির নিরীক্ষা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর কাজী কাইয়ুম শিশির ৬১০ জনের পূর্বের নিয়োগ বাতিল করে নুতন নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করার প্রস্তাব দেন। এ নিয়ে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়ের প্রফেসর কাজী কাইয়ুম শিশিরকে প্রকাশ্যে মিটিং এ অপমান করে এবং পরের সপ্তাহে তাকে পদাবনতি করে ঢাকার বাইরে বদলী করেন।
চলতি বছর বই ছাপাতে দেরি করানোর মূল কুশীলবের ভূমিকায়ও ছিল এই ছিদ্দিক জোবায়ের। সে মূলত সরকারকে বিপদে ফেলতে প্রথমে আওয়ামী লীগের লোকদেরই কৌশলে ছাপানোর কাজ দেয় যেখান থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময় হয় বলে একটি সূত্র জানায়।
অপর একটি সূত্র জানায়, বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ শিক্ষা সচিব থাকাকালীন সময়ে সিদ্ধান্ত হয় যে ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত বিভাগীয় এবং জেলা শহরের কলেজগুলোর প্রিন্সিপালদের এবং ১২ টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কন্ট্রোলার, শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক সহ সবাইকে সরানো হবে। কিন্তু সিদ্দিক জোবায়ের সচিব হিসেবে এসে সেগুলাকে আটকিয়ে রাখে। পরবর্তী সময়ে সুবিধাভোগীদের মাঝেই বুঝাপড়ার ভিত্তিতে বদলীর নামে আইওয়াশ করে। এখান থেকেও ছিদ্দিক জোবায়ের কমপক্ষে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগ নিয়েও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের সাথে সিদ্দিক জোবায়েরের ব্যাপক বাক-বিতন্ডা হয়।
তখন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক নেতা প্রফেসর কাজী কাইয়ুম শিশিরকে ৫ আগষ্টের পরে নিরীক্ষা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছিদ্দিক জোবায়ের সচিব হিসেবে আসার পর মাত্র ৬৩ দিনের মাথায় তাকে বদলী করে দেওয়া হয়। তার জায়গায় আওয়ামী লীগের হুইপ স্বপনের আত্মীয়, জয়পুরহাট সরকারি কলেজর প্রিন্সিপাল সাইফুল ইসলামকে বসানো হয়।
এভাবে গত ৮ মাসে নানান অনিয়মের মাধ্যমে ছিদ্দিক জােবায়ের কয়েক শত কোটি টাকার বাণিজ্য করে বলে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ছিদ্দিক জােবায়ের সচিব হিসেবে থাকাকালীন সময় শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করতেন বলে অনেক ভোক্তভোগী শিক্ষকের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সবমিলিয়ে ছিদ্দিক জোবায়েরের অতীত কর্মকান্ড বিবেচনায় আসামী হওয়ার পরিবর্তে চুক্তিতে সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় তখন সচিবালয়ে বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু কোন অদৃশ্য কারণে তার মত একজন আওয়ামী সুবিধাবাদী লোককে সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেটাই ছিল একটা বিস্ময়ের ব্যাপার।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে একাধিক বার মোবাইলে কল দিলেও ফোন রিসিভ না করায় ছিদ্দিক জোবায়েরের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।